রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা এক মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে রাজশাহী কারা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা দণ্ডপ্রাপ্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে ছেলের ফাঁসির বিষয়ে কিছুই জানেন না মহিউদ্দিনের মা। শতবর্ষী ওই বৃদ্ধা কানে না শোনায় তাকে কিছুই জানানো হয়নি।
মহিউদ্দিনের ভাই দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘মা এখনো জানেন না যে তার ছেলে আজ রাতেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলছে। পরিবারের কেউ তাকে কিছু বুঝতেও দিচ্ছেন না। বাড়িতে কোনো সংবাদকর্মী বা কোনো আত্মীয়-স্বজনের সমাগম দেখলেই তিনি জানতে চাইছেন কিজন্য এসেছেন? মা খবর শুনলে স্ট্রোক করতে পারেন এজন্যই তাকে কিছুই বলা হয়নি।’
গত মঙ্গলবার মহিউদ্দিনের সঙ্গে কারাগারে শেষ দেখা করেন পরিবারের সদস্যরা। তার সঙ্গে শেষ কথা কী হয়েছে এ বিষয়ে মহিউদ্দিনের চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের শেষ দেখা করার জন্য সময় দেন মঙ্গলবার দুপুর ১২টায়। আমরা সেখানে দেখা করেছি পাঁচজন। মহিউদ্দিনের স্ত্রী, ভাই আরজু মিয়া, বোন রিনা বেগম, আমি ও আরেক চাচাতো ভাই শাহীন মিয়া।’
তার সঙ্গে শেষ কথা কী হয়েছে এর উত্তরে মহিউদ্দিন বলেন, ‘অধ্যাপক তাহের ছিলেন আমার বাপের সমতুল্য। তিনি আমাকে হাতে গড়িয়ে মানুষ করেছেন। প্রায়ই আমি তার বাজার নিয়ে দিতাম। তার হত্যাকাণ্ডে আমি নির্দোষ, কিছুই জানতাম না। আমি ন্যায়বিচার পেলাম না, আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম।’
তার স্ত্রীকে মহিউদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু এদেশে ন্যায়বিচার পেলাম না, জায়গা-জমি বিক্রি করে আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেও।’
গত ১৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ২০ জুলাই ওই রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়।
ওই আবেদনে জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন আবারও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক ড. তাহেরের মরদেহ। এর দুদিন পর ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।