নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে এক দিনে ১৬ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। আর এ জন্য কেন্দ্রেীয় ব্যাংকের কাছে সুদ ও মুনাফা গুনতে হবে সর্বনি¤œ সাড়ে ৬ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ১৭ জুলাইয়ের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কাক্সিক্ষত হারে আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কিছু ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তারা আন্তঃব্যাংক থেকে ধার নেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও ধার নিচ্ছে। এতে এক দিকে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি কমে যাচ্ছে বিনিয়োগ সক্ষমতা।
অর্থনীতির সর্বশেষ সূচক দিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ সঙ্কট মেটাতে বেড়ে যাচ্ছে কলমানি সুদহার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের ৩০ জুন আন্তঃব্যাংক থেকে ১০০ টাকা ধার নিতে ব্যয় করতে হতো ৪ টাকা ৪২ পয়সা। গত বছর ১২ জুলাই তা বেড়ে হয় ৫ টাকা ৬৩ পয়সা। এক বছরের মাথায় গত ২৬ জুন প্রতি ১০০ টাকার জন্য আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ধার করতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় করতে হয়েছে ৬ টাকা ১৮ পয়সা। আর গত ১২ জুলাই এসে এ জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা। কলমানি মার্কেটের সুদহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত এক বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে কলমানি সুদহার। কলমানি সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে এখন কলমানি মার্কেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এ দিকে, ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে চাহিদা মতো টাকার সংস্থান করতে না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাজারে যখন টাকার চাহিদা বেশি থাকে তখন এক দিকে কলমানি মার্কেটে সুদহার বেড়ে যায়। অর্থাৎ টাকার কদর বেড়ে যায়। সংশ্লিষ্ট এক ব্যাংকার জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংকের টাকার সঙ্কট হলে কলমানি মার্কেট থেকেও চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাওয়া যায় না। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হয়। ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সুযোগে বিশেষ তারল্য সুবিধার আওতায় ধারের হার বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত ১৭ জুলাই সোমবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকার জোগান দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, লিকুইডিটি সাপোর্ট সুবিধা এবং শরিয়াহ্ ভিত্তিক ব্যাংকসমূহের জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি সুবিধা (আইবিএলএফ) এর নিলামের আয়োজন করে। ওই দিনের নিলামে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৪টি ব্যাংক ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার ১৮টি বিড দাখিল করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকাই সরবরাহ করে আলোচ্য ব্যাংকগুলোকে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি ১০০ টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুদ গুনতে হয় ৬ টাকা ৬০ পয়সা। ওই দিন ১ দিন মেয়াদি স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির আওতায় ১টি ব্যাংক ৫০ কোটি টাকার ১টি বিড দাখিল করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকার তহবিল জোগান দেয় ওই ব্যাংকের। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকটির সুদ গুনতে হয় প্রতি ১০০ টাকায় সাড়ে ৮ টাকা।
এ দিকে একই দিনে ১ দিন মেয়াদি লিকুইডিটি সাপোর্ট সুবিধার আওতায় ৯টি ব্যাংক মোট ৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকার ৪১টি বিড দাখিল করে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুদ গুনতে হয় সাড়ে ৬ শতাংশ। একই দিনে ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি সুবিধার আওতায় ২টি ব্যাংক মোট ৩৯৫ কোটি টাকার ২টি বিড দাখিল করে। অকশন কমিটি কল বিডই গ্রহণ করে। এ জন্য মুনাফা গুনতে হয় ৭ শতাংশ হারে।