ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ফ্রান্স

Slider সারাবিশ্ব

ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহতের জের ধরে চলমান সহিংসতা-দাঙ্গা গতকাল চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৩শ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে দেশটির বিভিন্ন শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন তার জার্মানি সফর স্থগিত করেছেন। খবর বিবিসি।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার সকালের দিকে বিক্ষোভের সময় পেচি কেলি শহরের একটি ছাদ ভেঙে একজন নিহত হয়েছেন। তার বয়স ২০। খবরে বলা হয়েছে, তিনিসহ আরও কয়েকজন একটি বিপণিবিতানে ছাদ ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। পুলিশের দাবি, তারা ওই বিপণিবিতানে লুটপাট চালানোর উদ্দেশ্যে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন।

ফ্রান্সে চলমান বিক্ষোভ শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার। ওই দিন দেশটির রাজধানী প্যারিসের শহরতলির নতেঁর একটি তল্লাশি চৌকিতে নাহেল নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে সেটি সহিংসতায় রূপ নেয়। ইতোমধ্যে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আইনজীবীর মাধ্যমে নাহেলের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এতেও বিক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিক্ষোভের তৃতীয় রাতে কমপক্ষে ৯৯৪ আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফ্রান্স সরকার ৪০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে। এ ছাড়া কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মারসেতে সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, নাহেলের পরিবার আলজেরিয়া থেকে এসে ফ্রান্সে স্থায়ী আবাস গড়েছেন। তাদের আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়।

প্যারিসের দরিদ্র অধ্যুষিত নাতেঁর এলাকায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন নাহেল। তারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। গত বৃহস্পতিবার নাহেল নিহত হওয়ার পর পরই আন্দোলন দানাবাঁধতে শুরু করে। ওই দিন বিকালেই নাহেলের মা মৌনিয়া তার নিহত ছেলের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানান এবং আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান। এর পরই আন্দোলন আরও তীব্র রূপ নেয়।

খবরে আরও বলা হয়, বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল মূলত রাজধানী প্যারিসে। সেখান থেকেই ক্ষোভের আগুন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্যারিসের মতোই জ¦লছে মার্সেইলি, লিয়ন, তুলুস, স্ট্রাসবুর্গ এবং লিলিসহ বেশকিছু শহর।

পর্যবেক্ষকমহল জানিয়েছে, চলমান আন্দোলন এখন দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিভিন্ন শহরে সমানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা, সরকারি-বেসরকারি ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দোকানে লুটপাট এবং যানবাহন জ্বালিয়ে দিচ্ছে দাঙ্গাকারীরা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী গত তিন দিনে ফ্রান্সজুড়ে ২ হাজারের বেশি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *