টঙ্গীতে ট্রাক টার্মিনালের অভাবে অসহনীয় যানজট!

Slider গ্রাম বাংলা


টঙ্গী: ৪৮ বছরেও টঙ্গীতে একটি টামিনাল গড়ে না উঠায় ৩শ গাড়ির ধারণাক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক ষ্ট্র্যান্ডে এখন বিচ্ছিন্নভাবে ১০ হাজার গাড়ি অবস্থান করছে। ষ্ট্যান্ডে জায়গা না পেয়ে টঙ্গী শহরের অলিগলিতে বিক্ষিপ্তভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় সন্ধ্যা হলেই পুরো শহর যানজটের নগরীতে পরিনত হয়। আর এই ফাঁকে একটি চাঁদাবাজচক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সরেজমিন টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় অবস্থিত ট্রাক ষ্ট্যান্ডে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। চেরাগ আলীর মূল ট্রাক ষ্ট্র্যান্ড ছাড়া কামার পাড়া রোড, মেঘনা রোড, ন্যাশনাল নিটউবস রোড, চেরাগ আলী রোড,পূর্ব থানার পিছনের রোড, মিলগেট সড়ক,চেরাগ আলী কোকোলা রোড ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলমান বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের নীচে বিভিন্ন জায়গায় ট্রাক লরি, পিকআপ, কাভাডভ্যান,মিনি পিআপ, ড্রাম ট্রাক সহ বিভিন্ন ধরণের ভারী ও হালকা যানবাহন দাাঁড়নো আছে। সকাল থেকে এ সকল যানবাহন টঙ্গীর ট্রাকষ্ট্যান্ডকে ঘিরে বিক্ষিপ্তিভাবে ওই সকল ছোট বড় সড়ক মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে দুপুরের পর থেকেই টঙ্গীতে শুরু হয় যানজট। রাত ১০টার পর ঢাকায় প্রবেশের অনুমতি থাকায় ওই সকল যানবাহন টঙ্গী ছেড়ে যায় ১১টার দিকে।

ন্যাশনাল টিউবস রোডে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাম ট্রাক কুষ্টিয়া-ট-১১-০২৬৫, ট্রাক ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৫৩০৩, ট্রাক ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৪৮২৯ ও মিনি পিকআপ ঢাকা মেট্রো-ভ-১১-১৩৮৪ সহ অস্যখ্য গাড়ি। এসকল গাড়ির চালক ও হেল্পাররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের গাড়ি প্রতি ৩শ টাকা থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই সকল চাঁদার টাকা ট্রাকষ্ট্যান্ডের লোক পরিচয়ে নিয়ে যায়।

মিল গেট এলাকার রিক্সাচালক দিনাজপুরের হালিম মিয়া জানান, সকালে যানজট কম হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তার দুই পাশে লাইন ধরে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট তৈরী হয়। বিশেষ করে বিকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টঙ্গীর চেরাগ আলীর চারিদিকে ছোট বড় রোডে যানজট লেগেই থাকে।

দেখা যায়, বিআরটি প্রকল্পের নির্মানাধীন ফ্লাইওভারের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য ট্রাক লরি ও পিকআপ যে কোন সময় দূর্ঘঘটনার পড়তে পারে।
টঙ্গীতে অবস্থিত গাজীপুর জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি(রেজি: নং ৪৪৮৬) এর সভাপতি হাজী মোঃ সাহাবুদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজাদ হোসেন। সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন জানান, গাড়ি প্রতি চাঁদার পরিমান ৫০টাকা। মালিক সমিতি ৩০ টাকা ও শ্রমিক ইউনিয়ন ২০টাকা। এর বেশী কোন চাঁদা নেয়া হয় না।

গাজীপুর জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি:নং ১২২১ এর সভাপতি হাজী আব্দুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুদু মিয়া। সভাপতি হাজী আব্দুর রশিদ জানান, ১৯৭৪ সনে আমাদের যাত্রা শুরু। মোট ৯বিঘা জায়গার মধ্যে ট্রাকষ্ট্যান্ড হলেও বেদখল হয়ে যাওয়ার পর এখন ৬বিঘা জায়গা আছে। ট্রাকষ্ট্যান্ডের চারিদিকে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত গাড়ি থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ৩০টাকা চাঁদা নেই। এর বেশী নেই না। এর বেশী কেউ নিয়ে থাকলে দলীয় ছেলেরা নিয়ে থাকতে পারে। তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে গেলে মারধর করে। এমনকি আপনারা গেলেও মার খাবেন।

বিএনপির আমলে তৎকালিন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমত উল্লাহ খান ট্রাকষ্ট্যান্ডের জায়গা ট্রাকষ্ট্যান্ডের নামে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএনপি সরকার এই জায়গা টেলিবাংলার নিকট বিক্রি করে দেয়। এরপর আজমত উল্লাহ খানা মামলা করেন। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটিকরপোরেশন হওয়ার পর প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান কিছুই করেননি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কিছু উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু কেউ টার্মিনালকে জায়গা দিতে পারেনি। তারা আশা করেন, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হওয়ায় আজমত উল্লাহ খানা তাদের দাবী পূরণ করবেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার(ট্রাফিক) আলমগীর হোসাইন বলেন, আমরা পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সাথে নিয়মতি কথা বলছি। মহাসড়কে কোন গাড়ি দাাঁড়ানো থাকলে রেকারিং করছি। মহাসগড়ককে যানজটমুক্ত রাখতে যা যা করার সবই করা হচ্ছে। প্রয়োজনে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *