কৃষকের ঋণেও সুদ বাড়ছে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


আগামী ১ জুলাই হতে ঋণের সুদের সীমা উঠে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে নতুন নিয়মে সুদ নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট। এ পদ্ধতিতে অন্য সব ঋণের সঙ্গে কৃষকের ঋণের সুদও বাড়ছে। বর্তমানে কৃষিঋণে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করা আছে। নতুন পদ্ধতিতে তা ৯ শতাংশের ওপরে উঠবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে সুদ নির্ধারণসংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়।

এর আগে নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন এ ব্যবস্থাটিই হচ্ছে ‘সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট। এ পদ্ধতিতে ছয় মাসের (১৮২ দিন) ট্রেজারি বিলের গড় হার ধরে ঠিক হবে রেফারেন্স রেট। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। প্রচলিত ব্যাংকের পাশাপাশি ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকেও একই নিয়মে মুনাফা হিসাব করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, এ পদ্ধতিতে ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় হার ধরে ঠিক হবে ‘রেফারেন্স রেট’। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট প্রতি মাসের প্রথম কর্মদিবসে ‘স্মার্ট ইনডেক্স’ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। ‘স্মার্ট ইনডেক্স’-এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে। আর কৃষি ও পল্লীঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করবে। গত ছয় মাসে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার রয়েছে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ। ফলে এর সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদ নির্ধারণ করলে তা সর্বোচ্চ হবে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। আর কৃষিঋণে ২ শতাংশ মার্জিন যোগ করলে তা দাঁড়াবে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ।

এতদিন ঋণের সুদে সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৯ শতাংশ, আর কৃষিঋণের সুদের সীমা ছিল ৮ শতাংশ। সার্কুলার অনুযায়ী, সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের আওতাধীন ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় ঋণে ৩ শতাশ মার্জিনের বাইরে আরও ১ শতাংশ তদারকি মাশুল যুক্ত হবে। ফলে এসব ঋণের সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। ছয় মাস মেয়াদি

ট্রেজারি বিলের সুদের হার ওঠানামা করলে সব ধরনের ঋণের সুদহারও ওঠানামা করবে। তবে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার আগের মতো ২০ শতাংশ বহাল থাকবে।

সার্কুলারে আরও বলা হয়, আগের মাসের রেফারেন্স রেটকে ভিত্তি ধরে পরবর্তী মাসের সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। কোনো নতুন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মাসের জন্য নির্ধারিত সুদহার কার্যকর হবে। সুদহার স্থির অথবা পরিবর্তনশীল যে প্রকৃতিরই হোক না কেন, ঋণ দেওয়ার আগে ঋণগ্রহীতার সম্মতি নিতে হবে। তবে পরিবর্তনশীল প্রকৃতির সুদহার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাস পরপর পরিবর্তন কার্যকর হবে।

গত রবিবার মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, ব্যাংকঋণের ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। এই সীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও রাজনৈতিক। আমাদের কৃতিত্ব, আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। যখন এই সীমা দেওয়া হয়েছিল, তখন ব্যাংকগুলোর সুদ ১৮ শতাংশে উঠেছিল। তখন বৈদেশিক ঋণের সুদহার ছিল ২ শতাংশ, এখন এটি ৯-১০ শতাংশ। আবার টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তার খরচ আরও বেশি হয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *