বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ শুরু কাল

Slider রাজনীতি

দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছয় বড় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল বুধবার (১৪ জুন) চট্টগ্রামে প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২২ জুলাই রাজধানী ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হবে। এর মধ্যে ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় সমাবেশ হবে। এসব সমাবেশ ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ ব্যানারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কর্মসূচি সফল করতে একাধিক টিম গঠন করে জেলায় জেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠন তিনটি। সার্বিকভাবে মনিটরিং করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এদিকে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছয় বড় শহরে অনুষ্ঠেয় তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে রাজধানীতে বিএনপির তরুণ নেতারা বিশাল শোভাযাত্রা করেছেন। গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় কর্মসূচি শুরু হলেও কয়েক ঘণ্টা আগেই প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। কার্যালয়ের সামনের সড়কে বৃষ্টির থৈ থৈ পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন বলে জানান ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু।

জাতীয়তাবাদী তরুণ নেতাকর্মীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়।

শোভাযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে ছয়টি বড় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করবে। কেন এই সমাবেশ? কারণ তরুণরাই বিশ্বের বিভিন্ন বিপ্লব ঘটিয়েছে। বহু দেশ আছে, যেখানে তরুণরা লড়াই-সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছে। ফ্যাসিবাদী শক্তির পরাজয় ঘটে তরুণদের সেøাগানে ও শক্তিতে। বাংলাদেশেও তারুণ্যের শক্তিতে এই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে।

রিজভী বলেন, আজকে তরুণদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ও পথ দেখাচ্ছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যার মাঝে আমরা তারুণ্য দেখি। আমরা সেই নেতা তারেক রহমানের অনুসারী। আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তির সন্তান। শেখ হাসিনা হচ্ছেন ভীতু। তিনি সে জন্যই দিনের ভোট রাতে করেন। আজকে তরুণদের আরও শক্তিশালী হয়ে বজ্রকণ্ঠে জেগে উঠতে হবে।

খায়রুল কবির খোকন বলেন, অতীতে যেভাবে ছাত্র-যুবকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করছে, আগামীতে তারা তাই করবে। এই তরুণ সমাজ দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবে না।

ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ দেশের তরুণ সমাজ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তারা জানেন না কীভাবে ভোট দিতে হয়। তারা দেখেছে দিনের ভোট রাতে দিতে। তরুণসহ দেশের সবার ভোটাধিকার এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে তরুণ সমাজ তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে রাজপথে নেমে এসেছে। এবার দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবে তারা।

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতারা হলেনÑ অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, মীর সরাফত আলী সপু, এবিএম মোশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, আজিজুল বারী হেলাল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, নজরুল ইসলাম আজাদ, আব্দুল খালেক, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী।

১১ দফার তারুণ্যের সমাবেশ : জানা গেছে, ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, রাজপথে বিজয় হোক’Ñ এই সেøাগান তুলে ধরে ১১ দফার ভিত্তিতে তারুণ্য সমাবেশ করছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এই এগারো দফা হচ্ছেÑ ১. আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে পরপর তিনটি জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনেই আমরা ভোট দিতে পারি নাই। আমরা স্বাধীনভাবে, ভীতিহীন পরিবেশে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই। ২. ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভীতিমুক্ত পরিবেশ চাই, ছাত্রীদের সম্ভ্রমের নিরাপত্তা চাই, নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন চাই। শিক্ষা উপকরণের মূল্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার নিশ্চয়তা চাই। ৩. দলীয় পরিচয় ও ঘুষবাণিজ্য নয়, মেধার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চাই। সরকারি চাকরিতে প্রবেশে যৌক্তিক বয়সসীমা চাই। ৪. স্বাধীন মতপ্রকাশের পথে অন্তরায় কালো আইন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বাতিল চাই।

৫. অবৈধ সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হাজার হাজার প্রতিবাদী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও অতি উৎসাহীদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। ৬. শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎকারী ও বিদেশে অর্থপাচারকারীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ৭. ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মেরামত করতে চাই। আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই। ৮. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির জন্য দায়ী আওয়ামী সিন্ডিকেটের হোতাদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ৯. গণতন্ত্রের মাতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। ১০. বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার চাই। ১১. লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন্ন রাখতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *