দেশে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে কাতার থেকে প্রতিবছর অতিরিক্ত আরও দেড় মিলিয়ন টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন জানিয়েছেন, চুক্তিটির আওতায় আগামী ১০ বছর একই দামে নির্দিষ্ট পরিমাণ এলএনজি আমদানি করা যাবে।
জানা গেছে, চুক্তি সই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল একটি ফ্লাইটে কাতার গেছে একটি প্রতিনিধি দল। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের পাশাপাশি এই দলে রয়েছেন জ্বালানি বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার। আজ চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত চুক্তি সই করতেই ওই সফরের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে চলতি মাসে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে দেশটি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন দিনের ওই সফরে জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কাতারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে বাড়তি এলএনজি আমদানির প্রস্তাব দিয়ে ইতিবাচক সাড়া পায় বাংলাদেশ। ওই সফরের সময় বাড়তি এলএনজি আমদানি করতে শিগগিরই চুক্তি সই হওয়ার ইঙ্গিত দেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল থেকে কাতার থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী বছরে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি সরবরাহ করছে কাতারের রাস লাফান লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। চলতি বছর দেশটি থেকে ৪০টি এলএনজি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। গত এপ্রিল পর্যন্ত এসেছে ১৪টি কার্গো। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর এই পরিমাণ আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কাতারের পাশাপাশি ২০১৯ সাল থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আসছে ওমান থেকেও। চুক্তি অনুযায়ী বছরে এক থেকে দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহের কথা দেশটির। চলতি বছর ১৬টি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে পেট্রোবাংলার। গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশে পৌঁছেছে ৫টি কার্গো। এর বাইরে
স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকেও সরকার ২০২০ সাল থেকে এলএনজি আমদানি করছে। এখন পর্যন্ত খোলাবাজার থেকে ৩৪ কার্গো এলএনজি কেনা হয়েছে। আরও কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
চাহিদা ও জোগান বিবেচনায় এলএনজি, জ্বালানি তেল আমদানির নতুন নতুন উৎস খুঁজছে বাংলাদেশ। জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে বিদ্যমান ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির বাইরে কাতারের সঙ্গে আরও একটি চুক্তির চেষ্টা অনেকদিন ধরেই ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরে তা আরও বেগবান হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজ নতুন চুক্তি সই হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিনিয়ত দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলন কমে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের পরে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসপ্রাপ্তি দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে যেতে পারে। অথচ তখন গ্যাসের চাহিদা থাকবে কমপক্ষে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি প্রধান ভরসা। এদিকে সরকার অদূর ভবিষ্যতে এলএনজি আমদানি ও সরবরাহে অবকাঠামো তৈরিতে জোর দিয়েছে। ইতোমধ্যে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির সক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল তৈরি করেছে। আরও অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির সক্ষমতা তৈরিতে নতুন করে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।