গাজীপুরে ভোটের অপেক্ষা আর কয়েক ঘন্টা

Slider জাতীয়

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন অপেক্ষা ভোটের। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলবে ভোট। এবার ভোট হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে এ নির্বাচন বড় প্রভাব রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজীপুর সহ ৫ সিটি নির্বাচন আগেই বর্জন করেছে বিএনপি। কিন্তু তারপরেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচনটি সহজ হবে না।

বিএনপির বর্জনের মধ্যেও গাজীপুরে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লাকে বিপদে ফেলতে পারেন অন্তত দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরা হলেন জায়েদা খাতুন ও রনি সরকার।

জায়েদা খাতুন গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের মা। জাহাঙ্গীর এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও ঋণ খেলাপের অভিযোগে তা পরে বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন।

আদালতের দারস্থ হয়েও প্রার্থীতা ফেরত পাননি জাহাঙ্গীর। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থীতা করায় এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর নির্বাচনে না থাকলেও ছায়া হয়ে থাকছেন জায়েদা খাতুনের। তার অনুসারীদের সমর্থনও পাচ্ছেন জায়েদা। নির্বাচনে এই ফ্যাক্টরটি জায়েদাকে অনেকটাই সামনে এগিয়ে রাখছে। অন্তত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভোটের একটি অংশ তার ঝুলিতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, রনি সরকার হলেন বিএনপির গতবারের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। রনির বাবা গাজীপুরের বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকার। আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে প্রকাশ্য জনসভায় ব্রাশফায়ারে হত্যা মামলায় নুরুল ইসলাম সরকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

বিএনপি পরিবারের সন্তান হওয়ায় গাজীপুরের বিএনপি সমর্থক ভোটারদের সমর্থন পেতে পারেন রনি। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দলের সুযোগে তিনি দিন শেষে ভোটের সমীকরণ বদলে দিতে পারেন। তাই গাজীপুরের ভোট যে, দিন শেষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রূপ নেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

গাজীপুরে আগের দুটি নির্বাচনের প্রথমটিতে বিএনপি ও দ্বিতীয়টিতে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০১৩ সালে প্রথম ভোট হয় গাজীপুর সিটিতে। সেবার ভোট হয়েছিলো নির্দলীয় প্রতীকে।

সেই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন করেছিলো আজমত উল্লা খানকে। তিনি ১ লাখ ৩২ হাজার ভোটে পরাজিত হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় গাজীপুরে। এতে দুই লাখ দুই হাজারের বেশি ভোটে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে হারিয়ে জয় পান নৌকার জাহাঙ্গীর আলম।

ভোট ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা

নির্বাচন সামনে রেখে দিনভর ব্যস্ত সময় পার নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকারা। সকাল থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় ভোটের সরঞ্জাম। নগরীর ৫টি স্থান থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে বিতরণ করা হয় ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী এ সব সরঞ্জাম। কড়া পুলিশ পাহারায় এগুলো পাঠানো হয় নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে।

ভোটের আগে পুরো সিটি করপোরেশন এলাকাকে ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আগামীকাল সবাই যেন আমাকে সহযোগীতা করে। একটি টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা যেনো গাজীপুরে মডেল নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।

‘এখানে বিভিন্ন স্তরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ডিপ্লয় করা হয়েছে। ৫ স্তরে তাদের ডিপ্লয়মেন্ট করা হয়েছে। পুরো সিটি করপোরেশন এলাকাকে নিরাপত্তার বলয়ের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।’

৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯১ টিতে রাখা হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে থাকবে একজন বেশি ১৭ জন।

অবশ্য নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছে না পুলিশ। বুধবার সকালে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফ্রিং করা হয়। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা জানান গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন সব সময় হয়েছে। এবারও হবে এটা আমরা দেখিয়ে দিতে চাই।

‘এখানে আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ১৩ হাজার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আছে। আমরা সবাই মিলে আগামী কালের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, সুন্দর হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’

ইভিএমে প্রথম ভোট, সবকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা

গাজীপুর সিটির বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন প্রায় ১২ লাখ ভোটার। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত ভোট হতে যাচ্ছে এই সিটিতে। এতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন। ভোট বর্জনের কারনে বিএনপি নির্বাচনে কোন প্রার্থী দেয়নি।

গাজীপুরে এবারই প্রথম ভোট হচ্ছে ইভিএমে। সেজন্য প্রতি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ইভিএম রাখছে নির্বাচন কমিশন। কোনো মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে তা ত্রুটিমুক্ত করা যায় সেজন্য পর্যাপ্ত ট্রাবলশুটিং কর্মকর্তাও থাকছেন কেন্দ্রগুলোতে।

পাশাপাশি নগরীর ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতেই থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ক্যামেরাগুলো এরই মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। কুমিল্লা, গাইবান্ধার মতো গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে দেখা যাবে এসব ক্যামেরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘সিসি ক্যামেরায় আমরা যদি কোনো অনিয়ম দেখি, সেটা তো রেকর্ডেড। এটাই তো আমাদের বড় প্রমাণ। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে আইন অনুযায়ী অ্যাকশন নেয়া হবে।’

ভোটের দিন ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। পাশাপাশি প্রার্থীদের এজেন্টদেরও অভয় দেন তিনি্

মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

‘এজেন্টের বিষয়ে বলা হচ্ছে বা ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা বলা হচ্ছে এগুলো আপনারা ভোটের দিন দেখতে পাবেন যে এ ধরনের কোন দ্বিধা আর থাকবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *