বড় হয়ে উঠতে পারে আঞ্চলিকতা ইস্যু

Slider বাংলার মুখোমুখি

টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভা নিয়ে গঠন করা হয়েছিল আয়তনে দেশের অন্যতম বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। বিগত দুই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পেছনে স্পষ্ট ছিল আঞ্চলিকতার ছাপ। দুই নির্বাচনেই বিজয়ী হয়েছেন গাজীপুর সদরের প্রার্থী। এবারও টঙ্গীর বাসিন্দা আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আগের দুই বারের মতো যদি এবারও আঞ্চলিকতার ইস্যু সামনে আসে তা হলে বেকায়দায় পড়তে পারেন ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থী। আর এমন আভাস দিচ্ছেন ভোটাররাই।

গাজীপুর সিটির ১ থেকে ৪২নং ওয়ার্ড পর্যন্ত সদর থানার আওতাভুক্ত। আর ৪৩ থেকে ৫৭নং ওয়ার্ড পর্যন্ত টঙ্গী থানার অধীন। গাজীপুর সদরে মোট ভোটার ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৩ জন, আর টঙ্গী থানার ভোটার ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬২০ জন। দুই এলাকায় ভোটারের এই ব্যাপক পার্থক্য নির্বাচনে বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে- এমন নজিরও রয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপির অধ্যাপক এমএ মান্নান। আর পরেরবার নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম। তারা দুজনেই গাজীপুর সদরের বাসিন্দা। প্রথমবার টঙ্গীর বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, পরেরবার টঙ্গীর বাসিন্দা হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিলে পরাজিত হয় বিএনপি। এবার আবারও আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আর গাজীপুর সদর থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

ইতোমধ্যে টঙ্গী এলাকায় প্রচার চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন জায়েদা খাতুন। গত দুই দিন ধরে তিনি গাজীপুর সদরে প্রচারে জোর দিয়েছেন। ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন তিনি। আঞ্চলিক ভোটগুলো নিজের বাক্সে ভরতে চান তিনি।

গাজীপুর সদরের তুলনায় টঙ্গীতে ভোটার কম হলেও এই এলাকা থেকে এবার আজমত উল্লা খান ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক এক নেতার ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। টঙ্গী এলাকায় সরকার পরিবারের প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছেন এই প্রার্থী। ফলে তিনি টঙ্গীতে আজমতের ভোটে ভাগ বসাতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই তীব্র কোন্দল রয়েছে বলে মনে করেন ভোটাররা। তাদের মতে, নির্বাচন এলেই কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে নির্বাচনের দিন দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বেশিরভাগ ভোটার।

চাপ বেড়েছে বিএনপির ওপরও : আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বয়কট করলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশি অভিযানের খবর প্রায় প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বহু বিএনপি কর্মী। আতঙ্ক ভর করেছে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর।

মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শওকত হোসেন সরকার জানান, গত কয়েকদিনে তার নিজের বাসা ছাড়াও, যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ আহমেদ, সদস্য মাহাবুবুল আলম, বাসন বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম, বশির আহমেদ, জিয়াউল হাসান ও যুবদল নেতা শওকতের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের সমর্থকদের ভয় দেখাতেই পুলিশি অভিযান বাড়ানো হয়েছে। অনেকে মনে করেন, নিজেদের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগবিরোধী বাক্সে চলে যেতে পারে বিএনপির ভোট।

নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মঞ্জুরুল করিম রনি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এই হয়রানি বন্ধের দাবি করেন।

তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে মহানগরের সব থানায় অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু মামলা বা অন্য বিষয় না থাকলে কোনো বিএনপির নেতাকর্মীর বাসায় অভিযানের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় ফের হামলা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচারণায় আবারও হামলা হয়েছে। গতকাল বিকালে টঙ্গীর ৫৭নং ওয়ার্ডের গরুহাটা এলাকায় এই ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। জায়েদা খাতুনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামলায় তার কয়েকজন সমর্থক আহত হয়েছেন।

জায়েদা খাতুনের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম জানান, তারা গণসংযোগ চালানোর সময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক নৌকার মিছিল নিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে হামলা চালায়। এতে একটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। কয়েকজন নেতাকর্মীও আহত হন।

গাজীপুর সিটির সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়নি। অন্যরা প্রচারণা চালিয়ে গেলেও আমাদের প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম হামলার কথা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী প্রচারে তার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় জায়েদা খাতুনের গাড়িচালক বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *