নাজমুল হোসেন শান্তর অভিষেক সেঞ্চুরি এবং তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়তে ৩ উইকেটের দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। যেখানে সব মিলিয়ে এটি থাকছে দুই নম্বরে। এর আগে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দেড়শতম জয়ের মাইলফলক এটি। ৪১১ ম্যাচ খেলে এই কীর্তি অর্জন করেছে তারা। বিপরীতে হেরেছে ২৫২ ম্যাচ। ফল আসেনি বাকি ৯টিতে।
নিরপেক্ষ ভেন্যু ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে দ্বিতীয় ম্যাচেও বৃষ্টির কারণে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ সময় ৩টা ৪৫ এর সময়। তবে বৃষ্টির কারণে সেই টস অনুষ্ঠিত হয়েছে সাড়ে ৫টায়। খেলা শুরু হয়েছে ৬টায়। দেরিতে শুরু হওয়ায় ম্যাচের দৈর্ঘ্যও কমিয়ে আনা হয়েছে। দুই দল ৪৫ ওভার করে ব্যাট করার সুযোগ পায়।
যেখানে প্রথমে ব্যাট করা আইরিশরা নির্ধারিত ৪৫ ওভার শেষে ৩১৯ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে আয়ারল্যান্ড। হ্যারি টেক্টরের অনবদ্য ১৪০ ও জর্জ ডকরেলের ঝড়ো ৭৪ রানে এই সংগ্রহ তোলে তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শান্তর সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ও ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
৩২০ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৩ রানের মাথায় আউট হন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ওয়ান ডাউনে মাঠে নামেন শান্ত। প্রথমে লিটন দাস, এরপর সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে তুলে নেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও।
৩২০ রানের লক্ষ্যে ১৩ রানে তামিমের বিদায়ের পর ৪০ রানের মাথায় ফেরেন লিটন (২১)। ১০১ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব (২৬)। চতুর্থ উইকেটে তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে এরপরে শান্ত গড়েন অনবদ্য জুটি। এই জুটিই মূলত বাংলাদেশকে জয় পাইয়ে দেয়। যেখানে দুজনে মিলে ১০২ বলে ১৩১ রান তোলেন।
হৃদয় অভিষেক ফিফটির পর ৫৮ বলে ৬৮ রান করে ডকরেলের শিকার হন। তিনি ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। আর বাঁহাতি শান্ত ৯৩ বলে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১৭ করে ক্যাম্ফারের বলে বিদায় নেন। শেষ দিকে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ২৮ বলে ৪টি চারে অপরাজিত ৩৬ রানে জয় নিশ্চিত করে সফরকারীরা। এছাড়া ১৯ রান করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
আইরিশ বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট পান ক্যাম্ফার ও ডকরেল।
টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আয়ারল্যান্ড। ব্যাটে নেমে পেসার হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে পড়ে আইরিশরা। ১৬ রান তুলতেই হারায় দুই উইকেট। প্রথম ওভারেই আইরিশ শিবিরে আঘাত হানেন হাসান। ওভারের পঞ্চম বলে পল স্টার্লিংকে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। কোনো রান না করেই ফেরেন স্টার্লিং।
সপ্তম ওভারে আবারও হাসানের আঘাত। ওভারের প্রথম বলে হাসানের বল খেলতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয় আইরিশ ওপেনার স্টিফেন ডোহানির। পয়েন্টে সহজ ক্যাচ ধরতে কোনো ভুল করেননি শুরু থেকেই দারুণ ফিল্ডিং করতে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ। ১২ রান করেন ডোহানি।
তবে এরপরই পাল্টা আঘাত শুরু করেন বালবির্নি-টেক্টর জুটি। ৯৮ রানের জুটি গড়ে দলকে স্বপ্ন দেখান বড় রানের। প্রথমে ধীরে শুরু করলেও আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বের হন এই দুজন। ১৬ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানো আইরিশরা তৃতীয় উইকেট হারায় ১১৪ রানে। তবে শরিফুল এর বেশি আর আগাতে দিলেন না এই জুটিকে। তার বলে আউটসাইড এজ হয়ে ফেরেন বালবির্নি (৪২)। ১৩৮ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন লোরকান টাকার। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কার্টিস ক্যাম্ফারও। তবে একপাশে অবিচল ছিলেন টেক্টর।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তো বাংলাদেশি বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়েছেন টেক্টর-ডকরেল জুটি। মাত্র ৬৮ বলে গড়েন ১১৫ রানের জুটি। ২৮২ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন টেক্টর (১৪০)। টেক্টর ফিরলেও ৪৭ বলে ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন ডকরেল। ৮ বলে ২০ রান করে অপরাজিত আরেক ব্যাটসম্যান মার্ক অ্যাডায়ার। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৪৫ ওভারে ৩১৯ রান করে আয়ারল্যান্ড।
বাংলাদেশের হয়ে ৯ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। শরিফুল ইসলামও ২ উইকেট নেন, তবে খরচ করেন ৮৩ রান। একটি করে উইকেট নেন এবাদত হোসেন ও তাইজুল ইসলাম।
অসাধারণ সেঞ্চুরি করা শান্তই ম্যাচ সেরা হন।
আগামী ১৪ মে একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।