বছর ঘুরতেই আদায় খরচ বেড়েছে তিনগুণ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

বাজারে পেঁয়াজ, রসুনের সঙ্গে হঠাৎ আদার দামও বেড়েছে। সপ্তাহ দু-একের ব্যবধানে পণ্যটির দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি আদা ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা এবং আমদানিকৃত আদা ২৪০ থেকে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহেও যা বিক্রি হয় যথাক্রমে ২২০ থেকে ২৪০ এবং ১৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। গত বছর এই সময় দেশি আদা ১০০ টাকা এবং আমদানিকৃত আদা ৮০ টাকাতেও পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ সরকারি এ সংস্থাটির হিসাবই বলে দিচ্ছে বছরের ব্যবধানে দেশি আদার দাম প্রায় তিনগুণ এবং আমদানিকৃত আদার দাম তিনগুণ বেড়েছে। সংস্থাটির বাজার প্রতিবেদন বলছে, গত এক মাসে দেশি আদার দাম প্রায় ২৪ শতাংশ এবং আমদানিকৃত আদার দাম প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আর এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ১৮৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। দাম বাড়ার এ হার থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, আদার পেছনে ভোক্তার খরচ কতখানি বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, প্রতিবছরে দেশে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আদার চাহিদা রয়েছে। সেখানে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার টন। আর চাহিদার বড় অংশই আসে দেশের বাইরে থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদা আসে চীন থেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে আদার বুকিং খরচ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেক আমদানিকারক আদা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। আমদানিকৃত আদার সরবরাহে টান পড়ায় দেশি আদার ওপর চাপ বেড়েছে। সেই সঙ্গে দামও লাফিয়ে বেড়েছে।

রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. হাবিবুর রহমান জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং খরচ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখে অনেক আমদানিকারক লোকসান এড়াতে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। এতে বাজারে দামটা বেড়েছে। তবে খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়েছে। হয়তো এ সুযোগে তারাও বেশি লাভ করছে।

এদিকে পেঁয়াজ-রসুনসহ অন্যান্য মসলা পণ্যের সঙ্গে আদার দাম অতিরিক্ত বাড়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা। তারা মনে করছেন আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মসলা ও মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর কদমতলী এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. কৌশিক আহমেদ বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই আদা, রসুন, পেঁয়াজসহ মসলা পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এটা এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবার অনেক আগে থেকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। এবার রোজাতেও দেখা গেছে নিত্যপণ্যের দাম অনেক আগে থেকেই বাড়ানো হয়েছে। এটা ব্যবসায়ীদের নতুন চালাকি। কোনো পণ্যের সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলে যৌক্তিক হারে বাড়ে না, বাড়ে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছে অনুযায়ী। আর অতিরিক্ত দামে কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। কারওয়ানবাজারের পাইকারি দোকানেই এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজিতে দাম পড়ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। খুচরা পর্যায়ে গিয়ে এ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহ তিনেক আগেও যা ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে কেনা গেছে।

ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের চড়া দামের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ওপর বাড়তি চাপ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের মৌসুম হলেও বাজারে সেভাবে সরবরাহ নেই। তাই দাম বাড়তি রয়েছে।

এদিকে রসুনেরও ঝাঁজে চোখে পানি ক্রেতাদের। সম্প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে আমদানিকৃত রসুনের কেজি মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্যেও উঠে এসেছে আমদানিকৃত রসুনের দাম এক মাসে ১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অপরদিকে দেশি রসুনের দামও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। সংস্থাটির হিসাবে এক মাসে দেশি রসুনের দাম প্রায় সাড়ে ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর এক বছরে পণ্যটির দাম ১১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *