‘ঝুলে গেছে’ বিকল্প মেঘনা সেতু

Slider সারাদেশ

প্রায় ১০ বছর আগে মেঘনা নদীর ওপর আরেকটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু সেই উদ্যোগ আজও আলোর মুখ দেখেনি। এখন এসে বলা হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে সেতুটি নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা হলো, এর অগ্রগতি নিয়ে সম্প্রতি অংশীজন সভা করে সেতু কর্তৃপক্ষ। মতামত নেয় দুই ধাপে কর্মশালা করার মাধ্যমে। অগ্রগতি একটুকুই। এখন পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে। এ নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হলে চূড়ান্তভাবে নির্মাণকাজ শুরু করলে তা শেষ হতে লাগবে চার বছর। সেতু বিভাগের সূত্রমতে, আগামী বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের আগে নির্মাণকাজ শুরুর সম্ভাবনা কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পিপিপিতে ঠেলে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ সেতু নির্মাণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে হলে নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া যেত।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে এ সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক করা হবে। এর নাম ‘ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নদীবনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়ক’।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন বলেন, আগে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে, এটা ঠিক। তবে পিপিপির অধীনে চলছে দেড় বছর ধরে। তার আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এখন যাচাই-বাছাই, প্রপোজাল সাবমিটসহ কিছু ধাপ বাকি রয়েছে। এরপর আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ের দিকে সব কিছু চূড়ান্ত হতে পারে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে সংযোগ তৈরি করবে প্রস্তাবিত সেতুটি। নির্মাণ করা হবে দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে পিপিপি-জিটুজি ভিত্তিতে। ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে ফেরিঘাটের ১০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হবে তৃতীয় মেঘনা সেতুটি। বর্তমানে ফেরির মাধ্যমে নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুরের মধ্যে যোগাযোগ করতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প অ্যালাইনমেন্ট হিসেবেও কাজ করবে সেতুটি। নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর ‘ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স’ ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার।

২০২০ সালের মার্চে সেতুর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ১৯ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান দাইয়ু ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং ও কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের সমন্বয়ে কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ৩ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুর উভয় প্রান্তে থাকবে ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটারের সংযোগ সড়ক।

সওজ সূত্র জানিয়েছে, ভুলতা-আড়াইহাজার-নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়কের বর্তমান প্রশস্ততা ৩ দশমিক ৭০ মিটার (১২ ফুট)। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্ততা সাড়ে ৫ মিটার (১৮ ফুট)। এটি যথাযথ মানের নয়। প্রশস্ততা কম হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

জানা গেছে, সওজের অধীনে সরকারি অর্থায়নে দুই লেনের ৩৬ কিলোমিটার একটি সড়ক তৈরি করা হবে। এটি হবে বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজার-ভুলতা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কড়াইকান্দি ফেরিঘাট থেকে নবীনগর পর্যন্ত। সওজের কুমিল্লা জোনের অধীনে সড়কটির মানোন্নয়ন করা হবে।

তৃতীয় মেঘনা সেতুটির আরেক প্রান্ত হবে আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী এলাকায়। এর ফলে আখাউড়া দিয়ে আগরতলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। তার মানে ঢাকা ও কুমিল্লার সঙ্গে আগরতলায় যাতায়াতের আরেকটি সহজ পথ তৈরি হচ্ছে। আখাউড়াগামী পণ্য ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ জাহাজ দিয়ে স্থলবন্দরে যেতে যে সময় লাগে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে স্থলবন্দর হলে সেখানে চার ঘণ্টা সময় কম লাগবে।

সওজের একটি সূত্র জানিয়েছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মাণ হবে ভুলতা-বাঞ্ছারামপুর-রাধিকা সড়কটি। এটি যুক্ত হবে কুমিল্লার মুরাদনগর-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে। সওজের অধীনে ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা মহাসড়কও হবে। দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার। আরেকটি সড়ক হবে ২৮ কিলোমিটারের; বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর-কোম্পানীগঞ্জে। ভুলতা থেকে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ময়নামতির দূরত্ব ৮৯ কিলোমিটার। অন্যদিকে ভুলতা থেকে মদনপুর হয়ে ময়নামতির দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া ভুলতা থেকে মুরাদনগর (কোম্পানীগঞ্জ) সংযোগ সড়কটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ককে সংযোগ করে। ভুলতা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর এ যোগাযোগের একটি বিকল্প সড়ক। এ সড়কটির উন্নয়ন হলে একদিকে কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যাতায়াত করা যাবে; অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরে অনায়াসে যাতায়াত সম্ভব হবে।

এ সেতু নির্মাণের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এ বি এম তাজুল ইসলাম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে সেতুটি করা হবে। দেরি হচ্ছে এটি যেমন ঠিক, আবার এও ঠিক যে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা কারণে অর্থের জোগান আপাতত কঠিন। এখন পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্পটি হবে। জেনেছি, এখন মোটামুটি শেষ পর্যায়ে এসেছে। আমার নির্বাচনী এলাকার সুবিধার্থে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি সেতুটির ব্যাপারে। মেঘনায় এ সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে। ঢাকা-সিলেটের ২২ কিলোমিটার ও ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার কমে যাবে। এলাকায় ব্যাপক শিল্প কারখানা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *