সরকারের অবস্থান কোন পক্ষে!

Slider জাতীয় রাজনীতি

81564_lead
বাংলাদেশ পরিস্থিতি খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্লগার অভিজিত রায় হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রীর কাছে প্রকাশ্যে কোন নিন্দা জানান নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে নিন্দা জানিয়ে থাকতে পারেন। অন্যদিকে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় স্বীকার করেছেন যে, তার দল বা সরকারের জন্য এর পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কারণ, আওয়ামী লীগ নাস্তিক সংগঠনের তকমা গায়ে লাগাতে পারে না। তাই এর মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয় তার জাতিকে হতাশ করেছেন। তাই কেউ নিরাপদেই বলতে পারেন যে, দেশের পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণ কমই (স্যাকি)। এর ফলে আরেকটি প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলো- কোন যুক্তিতে যুদ্ধাপরাধের বিচার দেশে ধর্মীয় মৌলবাদের মূলোৎপাটনে সহায়ক হবে? এসব কথা ভারতের দ্য ইকোনমিক টাইমসে লিখেছেন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক অমিতাভ মুখার্জী। ‘ক্যান শেখ হাসিনা অ্যাক্ট এগেইনস্ট বাংলাদেশী ফান্ডামেন্টালিস্ট?’ শীর্ষক মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি এসব কথা লিখেছেন। লেখাটি গতকাল অনলাইনে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি লিখেছেন, ভারতের নিরাপত্তার সঙ্গে সংঘাতময় এমন ইঙ্গিত বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির রায় নিশ্চিত করেছেন। এতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার অপরাধীদের বিচারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতায় আরও একটি পালক যুক্ত হলো। কিন্তু পর্যায়ক্রমে যেসব ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ পরিচয় সঙ্কটে পড়েছে। এতে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন প্রশাসনে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। অমিতাভ মুখার্জী লিখেছেনÑ আমাদেরকে আরও গুরুত্বপূর্ণ একেটি বিষয় মনে রাখতে হবে। তাহলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের আগে ও পরে ভারতীয় মিডিয়ায় ভুলভাবে বলা হয়েছে যে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমান্ত চুক্তিই মূল বিষয়। এক্ষেত্রে আলোচনার মূলে যেসব ইস্যু ছিল তার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ইস্যু, বাংলাদেশে ক্রমে বেড়ে ওঠা কট্টরপন্থি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তা তাদের কর্মকাণ্ড ভারতে পাঠানো এবং অবশ্যই নদীর পানি বন্টনের বিষয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয় তুলে ধরেছেন কিনা তা জানা যায় নি। ওই প্রতিবেদনে অমিতাভ মুখার্জী আরও লিখেছেন, এটা সত্য যে, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ দুই নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। দলের আরও মহারথীদের বিরুদ্ধে একই রকম রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে দেশের কট্টরপন্থিদের ওপর খুব কমই প্রভাব ফেলেছে। তাদের সংখ্যা প্রায় ৫৫০ লাখ। ভারত ও বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো ধর্মীয় জঙ্গিবাদ ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গত এপ্রিলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আওয়ামী ওলামা লীগ ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারপন্থি ব্লগারদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। ইসলামের ক্ষতি করে এমন অভিযোগে তারা জাতীয় শিক্ষা নীতি বাতিল করতে বলে। ইসলামী সুন্নাহর বিরুদ্ধে যায় বলে তারা বাল্য বিয়ের নীতি থেকে সরে যেতে আহ্বান জানায় সরকারের প্রতি। তারপর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা এই সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র না থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। কারণ, ওলামা লীগের দুটি অংশই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করছে এবং আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলোতে যোগ দিচ্ছে। গত রমজানে ওলামা লীগকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ইফতারি করানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে আরও একটি মজার বিষয় আছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের বড় মাপের নেতা ও শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সরাসরি সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ওলামা লীগ। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিবৃতি একটি বিষয় পরিষ্কার করেছে। তাহলো তার দল যুদ্ধাপরাধী ও অন্যান্য মৌলবাদী সংগঠন থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। বাংলাদেশ সরকার শুধু ব্লগারদের রক্ষায়ই ব্যর্থ হয় নি, পাশাপাশি তাদের কণ্ঠরোধের জন্য দমনমুলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছুটা পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ব্লগে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের কারণে আসিফ মহিউদ্দিনকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। ব্লগিং প্লাটফরমকে সরকার চাপ দিচ্ছে যাতে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয় নাএমন ব্লক যেন তারা বন্ধ করে দেয়। মৌলবাদীরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে স্থান সৃষ্টি করে নিয়েছে তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সম্ভবত বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন শেখ হাসিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রফেসর আবুল বারাকাতের মতে, রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র, অর্থনীতির ভিতরে অর্থনীতি সৃষ্টি করেছে জামায়াতে ইসলামী। তারা যেসব ব্যবসায় পরিচালনা করে তা থেকে বছরে ২৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার মুনাফা হয়। এর শতকরা ১০ ভাগ যায় হামায়াতে ইসলামীর কাছে এবং বাকিা ধর্মীয় অন্যান্য সংগঠনের কাছে। আবুল বারাকাতের মতে, দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যখন শতকরা ৬ ভাগ তখন জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৯ ভাগ। আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য হলো, জামায়াত পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে পরিমাণ অর্থ রয়েছে তা জাতীয় বাজেটের শতকরা ৮ দশমিক ৬২ ভাগ। ২০০৫ সালে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের প্রয়াত নেতা শায়ক আবদুর রহমান প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হতে ৪০ জন প্রার্থীকে তিনি সহায়তা করেছেন। জামায়াতের হাতে গোনা কয়েকজন এমপি আছেন। তাহলে জেএমবির সমর্থনে নির্বাচিত অন্যরা কারা? হাসিনাকে অবশ্যই তা বের করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *