জেসমিনকে কোন আইনে তুলে নেওয়া হয়েছিল, প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের

Slider রাজনীতি


র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁয় মারা যাওয়া সরকারি কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে কোন আইনে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে প্রতিবাদ আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ প্রশ্ন তোলেন।

সুলতানা জেসমিনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি কোনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু সরকারের একজন যুগ্ম সচিবের কথায়, তাকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। এটা সংবিধানের ভয়াবহ লংঘন। তাকে কোন আইনে তুলে নেওয়া হলো? তুলে নেওয়া ও নির্যাতনের কারণে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সুলতানা জেসমিন হত্যাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এই হত্যা প্রমাণ করে গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে বসে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার নির্যাতন করে, মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’

২০১৫ সালের গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েকজন র‌্যাব কর্মকর্তার সাথে পরিচয় হয়। তখন নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যা, সেই সাত হত্যার আসামি ছিল তারা। তাদের কাছে যে কাহিনী শুনেছি, সেই কাহিনী পরিষ্কারভাবে বলে, আমরা (র‌্যাব) হুকুমের চাকর, হুকুম দেয় আমরা কাজ করি। র‌্যাবে যারা আছেন, তারা ওপরের নির্দেশ ছাড়া কোনো কাজ করতে পারেন না।’

মির্জা ফখরুল আর বলেন, ‘সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক ডয়েচে ভেলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানেও পরিষ্কারভাবে বলছে, আমরা টপের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছি। টপের এই নির্দেশে যদি মানুষ হত্যা করা হয়, টপের নির্দেশে যদি মানুষকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্র কি রাষ্ট্র থাকে? গণতন্ত্র দূরের কথা রাষ্ট্রই তো থাকে না। আপনারা দেখেছেন, র‌্যাবের নির্যাতনে বহু মানুষ মারা গেছে এই বিষয়গুলো নিয়েই প্রতিবাদ, সারা দেশের মানুষ প্রতিবাদ করছে।’

বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে গণতন্ত্র ফিরে পেতে আমরা আন্দোলন করছি। এই সরকার আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম, হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। গত বছর থেকে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে ১৭ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিতে হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় করতে আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। গতকাল শনিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বাধা দিয়েছে। বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান, তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে আটক করা হয়েছে, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোক্তাদির, তাকে আটক করার কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যশোরে শার্শাতে আমাদের জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবুকে কুড়ালের বাট দিয়ে তার শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়েছে, মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে আহত হয়েছে। কোনো উসকানি ছাড়া এই আক্রমণ করেছে। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিকভাবে দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার যখন বলছে, এই আইনটা অনেকগুলো সংশোধন করা দরকার এবং দুটি ধারা বাতিল করা দরকার। তখন তথ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলেছেন, এই আইন বাতিল করা হবে না। এই আইন দিয়ে আপনারা জনগণের কথা বলার যে অধিকার, সেটাকে পুরোপুরিভাবে রুদ্ধ করে দিতে চান, কণ্ঠকে স্তব্ধ করিতে চান।’

নওগাঁয় র‌্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের হত্যার প্রতিবাদে আজ অনুষ্ঠিত সভায় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরীন খানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, মহিলা দলের নায়েবা ইউসুফ, রুমা আক্তার প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *