এখনও জ্বলছে আগুন, বের হচ্ছে ধোঁয়া

Slider জাতীয়

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ২৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পানি ছিটানো অব্যহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিস। যদিও গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর জানানো হয়েছে। তবে আজ বুধবার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, যেহেতু ভেতরে কাপড়ের গোডাউন রয়েছে, সেহেতু সেখান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে পানি ছেটানো হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া মার্কেটে আজও কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে। একাধিক স্থানে উঠেছে ধোঁয়া। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছে। জীবনের শেষ সম্বল হারানো হাজারো ব্যবসায়ীরা ঘুরে ঘুরে তা দেখছেন আর স্মৃতিচারণ করছেন

মার্কেটের উল্টোপাশে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের বারান্দায় বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন সোহেল। তিনি বলেন, ‘ঈদের জন্য দোকানে সব নতুন মাল তুলেছিলাম। দোকান-গোডাউন মিলে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাল ছিল। গত সোমবার রাত হয়ে যাওয়ায় মাল কেনার নগদ ৪০ লাখ টাকা ক্যাশে রেখে গেছিলাম। আজ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমার বাকি মাল যায় যাক, আমার নগদ টাকাটা বাঁচাতে পারলাম না। আমার সব শেষ হয়ে গেল ভাই।’

এনেক্সকো টাওয়ারের ইমরান গার্মেন্টসের কর্মী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘উপরে শুধু কাপড়ের দোকান। সেখানে কাপড়ের গোডাউন থাকায় অনবরত ধোঁয়া বের হচ্ছিল। এছাড়া অবশিষ্ট মালামালের যেন ক্ষতি কম হয় তাই পানি ছেটাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। আর এর মধ্যেই আমাদের মতো দোকানগুলোর লোকজন মালামাল বের করার চেষ্টা করছে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ বলেন, ‘আমাদের চারটা দোকান ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার আর কিছুই করার নেই। সামনে ঈদ সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল একদিনেই সব শেষ হয়ে গেল।’

সব হারিয়ে আহাজারি করছিলেন ‘রাসেল গার্মেন্টস’-এর কর্ণধার মুরাদ হোসেন। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিমিষে ভস্মীভূত হতে দেখে ভেঙে পড়েন তিনিও। মুরাদ বলেন, ‘এটিই আমার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল। আমি জানি না এখন পরিবার নিয়ে কী করব। ঋণের টাকা কোথা থেকে পরিশোধ করব। আদতেও দোকানের জায়গাটা আবার বুঝে পাব কিনা তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। বঙ্গবাজার থেকে আশপাশের আরও চারটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করে।

একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি-বিমান-নৌ ও সেনাবাহিনী। তবে তাদের পানি সংকটে পড়তে হয়। পানি সংকটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে পানি নেওয়া হয়। দীর্ঘ পাইপে পানি নেওয়ার কারণে চাপ না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটেছিল।

অন্যদিকে, হাতিরঝিল থেকে পানি নেয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার। কয়েক দফায় হেলিকপ্টারে করে হাতিরঝিল থেকে পানি নেওয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *