ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র : বেদান্ত প্যাটেল

Slider সারাবিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল গত বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবাদপত্রের সদস্য ও গণতন্ত্রের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের বছরে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, ‘সংবাদপত্রের কোনো সদস্যকে তাঁদের কাজ করার জন্য হুমকি দেওয়া, হয়রানি করা, শারীরিকভাবে আক্রমণ করা বা গ্রেপ্তার করা উচিত নয়।’

নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার অভিযোগে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকায় বিশিষ্টজনদের খোলা চিঠির বিষয়ে ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন ওঠে। জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, চিঠির বিষয়ে তাঁরা অবগত। দারিদ্র্য বিমোচনে মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকাও তাঁরা জানেন। এর বেশি কিছু বলার নেই।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ অনতিবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভোলকার তুর্ক বাংলাদেশের প্রতি এই আহ্বান জানান। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর গতকাল ওই বিবৃতি প্রকাশ করে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকার পটভূমিতে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার এই আহ্বান জানিয়েছেন। হাইকমিশনার ভোলকার তুর্ক বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা এই আইনের অপপ্রয়োগ ঠেকাবে। কিন্তু ওই আইনে গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।

ভোলকার তুর্ক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সারা বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকার রক্ষাকারীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও ভয় দেখানো এবং অনলাইনে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।’ তুর্ক বলেন, ‘আমি আবারও কর্তৃপক্ষকে ওই আইন প্রয়োগ স্থগিত করার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার জন্য আইনটিকে ব্যাপকভাবে সংস্কার করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমার দপ্তর এরই মধ্যে এ ধরনের সংশোধনে সহায়তা করার জন্য বিশদ কারিগরি মন্তব্য প্রদান করেছে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, প্রতিবেদক শামসুজ্জামানসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে দুই হাজারেরও বেশি মামলা করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে একটি পোস্টে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পরিতোষ সরকার নামের এক যুবককে এই আইনে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

হাইকমিশনার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সব মামলা পর্যালোচনার জন্য একটি বিচার বিভাগীয় প্যানেল গঠনের আহ্বান জানান। তিনি ‘অধিকার’-এর আদিলুর রহমান খান ও নাসিরুদ্দিন এলানের চলমান বিচারের বিষয়েও তাঁর উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

‘প্রতিহিংসামূলক তদন্ত’ বন্ধের আহ্বান সিপিজের

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক সব তদন্ত বন্ধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। একই সঙ্গে সিপিজে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজ করতে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, সাংবাদিক শামসের মুক্তির দাবিতে গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে চলে এ অবরোধ। এতে দুই পাশে যানবাহনের লম্বা সারি দেখা যায়। এ সময় অবরোধকারীরা শামসের মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন।

বিক্ষোভকারীরা আগামী রবিবারের মধ্যে শামসের মুক্তি দাবি করেছেন। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি দেবেন বলে জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের রমজানের দিনে জনমানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করতে বলায় তারা অবরোধ উঠিয়ে নিয়েছে। অবরোধের ইস্যুটা যেহেতু রাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রই এটার সমাধান করবে।

নিন্দা জানাল ওয়ার্কার্স পার্টি

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো গতকাল এক বিবৃতিতে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একাধিক মামলাসহ গত কয়েক দিনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার আরেকটি উদাহরণ তৈরি হয়েছে।

আর্টিকল নাইনটিনের উদ্বেগ

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকল নাইনটিন প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আর্টিকল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল এক বিবৃতিতে বলেন, দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *