আড্ডায় মুখর মেলা প্রাঙ্গণ

Slider সাহিত্য ও সাংস্কৃতি


মেলার বয়স যত বাড়ছে, মেলাকেন্দ্রিক আড্ডাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। কখনো বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে, কখনো পরিবার পরিজন কিংবা প্রিয় মানুষকে নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে জমে উঠছে আড্ডা। মেলার দ্বার খোলার পর বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকের আড্ডার একমাত্র ঠিকানা হয়ে ওঠে অমর একুশে বইমেলার দুই প্রাঙ্গণ।

গতকাল সোমবার বিকালে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, একাডেমির নতুন ভবনের সামনে পুকুর পাড়ে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের আশপাশে ও লিটল ম্যাগ চত্বরে, উদ্যানের গ্লাস টাওয়ারসংলগ্ন লেকের পাড়, কালীমন্দিরের পুকুর পাড়ে জমে উঠেছে ছোট, বড় স্থায়ী ও অস্থায়ী দলগত আড্ডা। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ নানা বিষয় উঠে আসছে এসব আড্ডায়। এ ছাড়াও নতুন-পুরনো বইয়ের আলোচনাও উঠে আসে এসব আড্ডায়।

মেলা ঘিরে রাজধানীর কারও কারও বিকাল থেকে সন্ধ্যার ঠিকানা হয়ে ওঠে বইমেলা। বন্ধু-বান্ধব আর পরিবারের সঙ্গেও এ সময় জমে ওঠে আড্ডা খোশগল্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ সময় বইমেলা নিয়ে থাকে ভীষণ রকমের মাতামাতি। অনেকের কাছে বই আর আড্ডার মধ্য দিয়েই যেন কেটে যায় বইমেলার দিনগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ও কামাল মনে করেন, এটা কেবল মেলা নয়, একটা উৎসবও। তারা জানালেন, প্রতিদিন বিকাল হলেই বন্ধুরা চলে আসেন মেলায়। বইমেলা কেন্দ্র করে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটা তাদের কাছে হয়ে ওঠে মিলনমেলা।

বাংলা একাডেমির প্রশাসনিক ভবনের পাশের পুকুর পাড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন আরমান ও রাসেলসহ আরও কয়েকজন। বইমেলায় নিয়মিত আড্ডা দেওয়া হয়ে কিনা জানতে চাইলে আরমান বলেন, ‘প্রতিবছরই মেলার দিনগুলোতে আসা হয়। বন্ধুরা মিলে আসি। বই দেখি, কিনি এবং আড্ডা দেই। এই আড্ডা থেকে অনেক কিছু শিখতে পাচ্ছি।’

লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক ও গবেষক সৈয়দা আঁখি হক বলেন, মেলার আড্ডা আমার কাছে খুবই কাক্সিক্ষত। আমরা যারা লেখক তারা তো বছরের ১১ মাস লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ইচ্ছে থাকলেও সারা বছর অনেকের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মেলায় তাদের সকলের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।

লেখক ও প্রকাশক হাবিবুর রহমান রোমেল বলেন, ‘বই প্রকাশ এবং কেনা সারা বছরই সম্ভব। কিন্তু লেখক, পাঠক ও প্রকাশক আড্ডার জন্য মুখিয়ে থাকে বইমেলার। কারণ বাঙালিমাত্রই আড্ডাপ্রিয়। আর অমর একুশে বইমেলার প্রাণ হলো আড্ডা।’ গতকাল সোমবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিন। এদিন মেলা চলে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

নতুন বই : গতকাল নতুন বই এসেছে ১২১টি। এর মধ্যে গল্পের বই ১৬টি, উপন্যাস ২৪, প্রবন্ধ ৫, কবিতা ৩২, ছড়া ২, গবেষণা ১, শিশুসাহিত্য ৩, জীবনী ৮, রচনাবলি ২, মুক্তিযুদ্ধ ৩, নাটক ১, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৫, ধর্ম ১, অনুবাদ ১, অন্যান্য ১৩টি।

বইমেলার আয়োজন : এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : কাজী রোজী এবং স্মরণ : দিলারা হাশেম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ এবং তপন রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান এবং শাহনাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অসীম সাহা।

লেখক বলছি : নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মোজাম্মেল হক নিয়োগী, রহীম শাহ, সত্যজিৎ রায় মজুমদার এবং তুষার কবির।

সাংস্কৃতিক আয়োজন : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, ফারুক মাহমুদ এবং আতাহার খান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহিদুল ইসলাম এবং অনন্যা লাবনী। এ ছাড়া ছিল সাইমন জাকারিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আজগর আলীম, আবুবকর সিদ্দিক, বিমানচন্দ্র বিশ্বাস, রহিমা খাতুন, শান্তা সরকার।

আজকের আয়োজন : আজ মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : মাহবুব তালুকদার এবং স্মরণ আলী ইমাম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গাজী রহমান ও আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন লুৎফর রহমান রিটন, ড. নিমাই মণ্ডল, আমীরুল ইসলাম এবং ওমর কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফরিদুর রেজা সাগর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *