বিএনপি নেতারা কে কোথায়?

Slider রাজনীতি

imagesমামলার চাপ ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নীতি-নির্ধারণী ফোরামের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বেশির ভাগই নিষ্ক্রিয়। বর্ষীয়ান নেতাদের প্রায় সবাই ভুগছেন শারীরিক নানা অসুস্থতায়। কেউ কেউ সীমিত পরিসরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও অনেকেই কাটাচ্ছেন অবসর সময়। আবার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কারাগারে দিন কাটছে অনেকের। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছেন না তারা। আবার অনেকে কয়েকদফা কারাভোগের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন রাজনীতিতে। কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সমঝোতা ও গা-বাঁচানোর। কারও ঘাড়ের ওপর মামলার পাহাড় জমলেও আইনি জটিলতা মুক্ত সৌভাগ্যবান নেতাও রয়েছেন দলটিতে। আবার আত্মগোপন কৌশলে সরকার এবং দল দুকূলই রক্ষা করছেন কেউ কেউ।
দলের স্থায়ী কমিটির পরিধি বাড়িয়ে ১৯ সদস্যে উন্নীত করা হয় ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে। স্থায়ী কমিটির প্রথম সদস্য হলেন- চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহেই ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে। ৫ই জানুয়ারি ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘায়িত হয় তার এ অবরুদ্ধ পরিস্থিতি। এরই মধ্যে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। অবরোধকে কেন্দ্র করে সংঘটিত নাশকতার ঘটনায় একের পর এক মামলায় হুকুমের আসামি করা হয় খালেদা জিয়াকে। গ্রেপ্তারের গুঞ্জনও ওঠে কয়েক দফা। শেষে বিশেষ আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের পর কার্যালয় ছেড়ে বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে প্রচারণা চালাতে গিয়ে দফায় দফায় হামলার শিকার হয় তার গাড়িবহর। কিন্তু সরকারের তরফে এ ব্যাপারে দেখানো হয় পুরোপুরি নীরবতা। বর্তমানে বাসায় অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন তিনি। স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় সদস্য মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন কয়েক বছর আগেই। নীতিনির্ধারণী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. আরএ গনি। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি ভুগছেন বার্ধক্যজনিত রোগে। দলের নীতি-নির্ধারণী সভা ছাড়া কোন কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ নেই। ফলে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোন মামলা-মোকদ্দমায়ও আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি তার নাম। বর্তমানে ধানমন্ডির নিজ বাড়িতে অলস দিন কাটছে তার। কমিটির আরেক প্রভাবশালী সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০১০-১৩ সালে বিভিন্ন আন্দোলনের সময় দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামি তিনি। তবে মানি লন্ডারিং মামলায় ২০১৪ সালের ১৩ই মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় ড. মোশাররফকে। এরপর থেকেই কাশিমপুর কারাগারে বন্দি এই নেতা সম্প্রতি রাতে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে গিয়ে ওজু করার সময় মাথা ঘুরে বাথরুমে পড়ে গিয়ে অচেতন হন। অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে দিন কাটছে তার। স্থায়ী কমিটির আরেক প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মহাজোট সরকারের আমলে কয়েকদফায় কারাভোগ করেছেন। তবে রাজধানীর গুলশানে পরিত্যক্ত বাড়ি দখলের অভিযোগে দুদকের মামলায় ২০১৪ সালে সর্বশেষ গ্রেপ্তার হন তিনি। জামিনে কারামুক্তির পর অনেকটাই গুটিয়ে যান সিনিয়র এ নেতা। বিভিন্ন আলোচনা সভায় দাওয়াত দেয়া হলে সেখানে রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন না বলে আগেই শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি তার একটি টেলিফোন আলাপ ফাঁস হলে দেখা যায়, সেখানে তিনি মন্তব্য করেছেন- ‘এই বিএনপি দিয়ে কিছু হবে না’। রাজনীতিতে দলবদলের অন্যতম এ চরিত্র দীর্ঘদিন থেকেই দলীয় মহলে ভুগছেন আস্থার সঙ্কটে। ওয়ান-ইলেভেনের প্রাক্কালে নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য করা হয়েছিল এম শামছুল ইসলাম ও লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানকে। নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য মনোনীত করার পর প্রথম থেকেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন শামছুল ইসলাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সিনিয়র এ নেতা দীর্ঘদিন থেকে দলের নীতি-নির্ধারণী বৈঠকেও অংশ নিতে পারছেন না। বেশ কয়েক বছর আগে সহকারীর কাঁধে ভর দিয়ে শেষবার দলীয় বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মামলার চাপ না থাকলেও সম্প্রতি স্ত্রী বিয়োগ ঘটার পর আরও ভেঙে পড়েছেন এ নেতা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপ্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন দিতে গিয়ে শেরেবাংলা নগর এলাকায় কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন মাহবুবুর রহমান। দলীয় ফোরামে আস্থার সঙ্কটে ভোগা এ নেতা অতিকথনের জন্যও শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে হারিয়েছেন আস্থা। এ কারণে ২০১২-১৪ সালে নীতি-নির্ধারণী ফোরামের অনেক বৈঠকে দাওয়াতও পাননি তিনি। তবে ঘরোয়া আলোচনা সভায় সক্রিয় এ নেতার নামে কোন মামলা হয়নি আন্দোলনের সময়। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া দীর্ঘ এক টেলিফোন আলাপে তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন খোলাখুলি। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফের কর্মীদের রোষানলে পড়েছেন তিনি। ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠিত স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত নতুন সদস্যদের মধ্যে সিনিয়র হলেন তরিকুল ইসলাম। ফুলটাইম রাজনীতিক হিসেবে খ্যাত এ নেতা শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছেন দীর্ঘদিন ধরে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সফরে গিয়ে দিল্লিতেও হঠাৎ মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বেশির ভাগ সময় তিনি যশোরে অবস্থান করেন। তবে আন্দোলনের সময় অন্য নেতারা যখন আত্মগোপনে তখন নানা কৌশলে মাঝারি সারির নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তরিকুল ইসলাম। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির সময় তার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা। আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে অংশ নিয়েছেন তিনি। বৈঠকের পর ফের চলে গেছেন আত্মগোপনে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ ওয়ান-ইলেভেনের সময় জোরালো ভূমিকা ও বারবার কারাভোগের পুরস্কার হিসেবে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন। মহাজোট সরকারের আমলে নানা মামলায় আসামি হিসেবে কয়েকবার কারাভোগও করেছেন। তবে বছরখানেক ধরে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় তিনি। সম্প্রতি ছোট ছেলের গুরুতর অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে আরও গুটিয়ে গেছেন এ নেতা। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এম কে আনোয়ার ওয়ান-ইলেভেনের পর খালেদা জিয়ার অন্যতম বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পান। নানা সময় কয়েকদফায় কারাভোগও করেছেন। হেফাজতের আন্দোলনের সময় কোরআন পোড়ানোর ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের মামলায় আসামি করা হয় এমকে আনোয়ারকে। শারীরিক অসুস্থতা ও মামলার চাপে বছরখানেক ধরেই আত্মগোপনে এই নেতা। স্থায়ী কমিটির একমাত্র নারী সদস্য হলেন- বেগম সারওয়ারী রহমান। দলীয় কিছু বৈঠকে অংশগ্রহণ ছাড়া কোন কার্যক্রমে সক্রিয় নন বয়স্ক এ নেত্রী। আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে অংশগ্রহণ ও উচ্চ আদালতে বিএনপি নেতাদের মামলায় সহযোগিতা করেন। কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ফোরামের বৈঠকের বাইরে ঘরোয়া আলোচনা সভাগুলো ও বিএনপির কূটনীতিক উইংয়ের সক্রিয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার বাসভবন লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটলেও মামলার চাপে নেই তিনি। স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্যদের মধ্যে প্রভাবশালী মির্জা আব্বাস। খালেদা জিয়ার অন্যতম বিশ্বস্ত হিসেবে খ্যাত এ নেতা সে অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর কমিটির বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার এ নেতাকে আহ্বায়ক করেই নতুন কমিটি দেন খালেদা জিয়া। কমিটি গঠনের আগে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নানা মামলায় আসামি হিসেবে কারাভোগ করেছেন তিনি। তবে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে তার বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলার গুঞ্জন ওঠে দলীয় ফোরামে। পছন্দমতো সদস্য সচিব না পাওয়ায় তার কিছু ভূমিকা শুরুতেই স্থবির করে দেয়া মহানগর বিএনপির কর্মকাণ্ড। পরে শারীরিক অসুস্থতা ও আত্মগোপনে থাকার কৌশলে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় থাকেন তিনি। মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। জামিন না পেলেও গ্রেপ্তারও করা হয়নি তাকে। সর্বশেষ অবরোধের সময় গাড়িতে পেট্রল বোমা হামলায় পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট থেকে বাদ যায় তার নাম। এ নিয়ে গুঞ্জনের নতুন ডালপালা ছড়ায় রাজনৈতিক মহলে। রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ দেখলেই বিদেশ চলে যাওয়া বা হাসপাতালে ভর্তির একটি রেকর্ড গড়েছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান। যদিও ২০১৩ সালে নয়াপল্টনে একবার গুলিবিদ্ধ হন তিনি। কৌশলগত নিরাপদে থাকা এ নেতা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলাকালে প্রায় একমাস অবস্থান করেছেন চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে অংশ নেয়ার পরক্ষণেই তিনি ভর্তি হন হাসপাতালে। কণ্ঠনালীতে একটি অপারেশনের পর তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মহাজোট সরকারের আমলে কয়েক দফায় কারাভোগ করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অনির্দিষ্টকালের অবরোধকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তারের পর তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারে বন্দি। রাজপথে থেকে ঘরোয়া সভা, উচ্চ আদালত থেকে টকশো সবখানেই মুখর ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। একাধিক মামলায় আসামি এবং কারাভোগও করেছেন। তবে বেশকিছু দিন ধরেই তিনি আত্মগোপনে। নীতি-নির্ধারণী ফোরামের আরেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই কারাভোগ করছেন। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে স্থায়ী কমিটির সদস্য তারেক রহমান ওয়ান-ইলেভেনের পর দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে চিকিৎসার জন্য বৃটেন যান। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে সরকার। এছাড়া গণমাধ্যমকে তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ না করার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দলের অন্যতম নীতি-নির্ধারক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিগত কয়েক বছর ধরে মামলার পর মামলা জোয়াল চেপে বসেছে তার ঘাড়ে। কারাভোগ করেছেন দফায় দফায়। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় কারাভোগ করছেন কাশিমপুরে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ট পরিষদের প্রথম সদস্য খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমেদ, সাঈদ এস্কান্দার ও মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে হারুনার রশিদ খান মুন্নু, উকিল আবদুস সাত্তার, ফজলুর রহমান পটল বর্তমানে অনেকটাই অবসর জীবনযাপন করছেন। কারাভোগ করছেন গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, মোসাদ্দেক আলী ফালু ও শামসুজ্জামান দুদু। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে কূটনীতিতে সক্রিয় রিয়াজ রহমান অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। এখনও হাসপাতাল এবং বাসায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে তাকে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে রাজনীতি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এডভোকেট আহমদ আজম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কূটনীতিক তৎপরতা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আদালত অঙ্গনে এজে মোহাম্মদ আলী, চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দেখভালে এমএ কাইয়ুম সক্রিয় রয়েছেন। বিদেশে অবস্থান করে কূটনীতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ড. ওসমান ফারুক। ঘরোয়া আলোচনা সভায় মাঝে-মধ্যে উপস্থিত হন শওকত মাহমুদ, মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, মে. জে. (অব.) মাহমুদুল হাসান, মে. জে. (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মুশফিকুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া আবদুল আউয়াল মিন্টু মামলার চাপে আত্মগোপন এবং নুরুল ইসলাম দাদু ভাই খুলনায় অবস্থান করছেন। তবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই- ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, এএসএম আবদুল হালিম, জহুরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ হায়দার আলী, খন্দকার শহিদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন সুজাউদ্দিন ও আবদুল মান্নানের সাংগঠনিক, রাজনৈতিকসহ সবধরনের ঘরোয়া আলোচনা সভাতে উপস্থিতি চোখে পড়ে না। তাদের মধ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আবদুল মান্নান ছাড়া অন্যদের উপর মামলার চাপও নেই। সিটি নির্বাচনের পর রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছে মনজুর আলম।
দলের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টিএইচ খান বার্ধক্যজনিত কারণে নিষ্ক্রিয় হলেও আইনগত দিক থেকে বিএনপি নেতা ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের নানারকম পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় দিন কাটাচ্ছেন এম মোরশেদ খান ও হারুন আল রশিদ। চিকিৎসার উদ্দেশে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। পরে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত ও রেড নোটিস জারি করে সরকার। ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাও চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিএনপির কূটনীতিক উইংয়ের নেতৃত্ব দেয়া শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডজনখানেক মামলার আসামি ও কয়েকদফায় কারাভোগ করেছেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনিও গুটিয়ে নিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধি দলে ছিলেন না তিনি। আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু কারাভোগ করছেন অর্ধযুগ ধরেই। রাজনীতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে পুরোমাত্রায় সক্রিয় রয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান ও সেলিমা রহমান। বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনায় মাঝে মধ্যে অংশ নেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। অন্য দুই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে রাবেয়া চৌধুরী কুমিল্লায় অবস্থান ও রাজিয়া ফয়েজ মৃত্যুবরণ করেছেন।
যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু বেশ কিছুদিন ধরেই আত্মগোপনে। দফায় দফায় কারাভোগ করেছেন শারীরিকভাবে পঙ্গু রিজভী আহমেদ। কয়েক মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে মেয়র নির্বাচনে প্রচারণায় যুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান। কয়েকদিন আগে একটি অপারেশনের পর শারীরিকভাবে অসুস্থ শাহজাহান বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনির্দিষ্টকালের অবরোধকালে আত্মগোপনে থেকে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বপালনকালে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। দুইমাস পর অসুস্থ অবস্থায় তিনি উদ্ধার হন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কয়েকদিন কারাভোগের পর বর্তমানে তিনি টাউন জামিনে (শিলং শহর না ছাড়ার শর্ত) রয়েছেন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে কবে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন সেটা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে। সাম্প্রতিক আন্দোলনে আত্মগোপন কৌশলে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ফজলুল হক মিলন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, হারুনুর রশীদ ও আসাদুল হাবিব দুলু। রাজনীতি ও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় গোলাম আকবর খন্দকার কারাভোগ করলেও মশিউর রহমান কৌশলে গ্রেপ্তার এড়িয়ে কাজ চালাচ্ছেন।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে- আন্তর্জাতিক সম্পাদকদের মধ্যে মামলার চাপ ও বারবার কারাভোগের পর জামিন পেয়ে এহছানুল হক মিলন কিছুদিন ধরে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। নাজিমউদ্দিন আলম ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় অন্য দুইজন লুৎফর রহমান খান আজাদ ও জাকারিয়া তাহের সুমন। অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর দেশে ফিরলেও বর্তমানে আত্মগোপনে। প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক মহাজোট সরকারে প্রথম কয়েকবছর সক্রিয় থাকার কারণে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং কারাভোগ করেছেন। এখন তিনিও গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। কয়েকমাস কারাভোগের পর বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা মুক্তি পেলেও চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী। অন্য সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, নজরুল ইসলাম রাজন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সহ-শিল্পবিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পাদক, শ্রমিকবিষয়ক, কৃষিবিষয়ক, বন ও পরিবেশ, পরিবার কল্যাণ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক, তাঁতি বিষয়ক, শিশুবিষয়ক, প্রবাসী কল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক, মৎস্যজীবীবিষয়ক, সহ-শিক্ষাবিষয়ক, সহ-সমাজকল্যাণ, সহ-ক্রীড়া, সহ-যুববিষয়ক, সহ-শ্রমবিষয়ক, সহ-কৃষিবিষয়ক, সহ-পল্লী উন্নয়ন ও সহ-গ্রাম সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদকীয় পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক ও আন্দোলন-সংগ্রামে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *