নায়িকা মাহির সঙ্গে ছবি তোলায় চেয়ারম্যানকে ‘ফিনিশ’ করার হুমকি এমপির

Slider বিনোদন ও মিডিয়া


এবার এক ইউপি চেয়ারম্যানকে ‘ফিনিশ’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি সোহেল রানা নামে ওই চেয়ারম্যানকে সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সামনেই লাঞ্ছিত করেন। জানা যায়, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় সোহেল রানার ওপর চটেছেন এমপি।

স্থানীয়রা জানান, গত জুলাইয়ে রাজাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষকে পিটিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। পরে অধ্যক্ষকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ফারুক চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনেও দেখা যায় অধ্যক্ষ সেলিম রেজার গালে মারের চিহ্ন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে অধ্যক্ষকে পেটানোর বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

এবার গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনা জানাজানির পর রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় চলছে।

এলাকাবাসী আরও জানান, এমপি ফারুকের হাত ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন সোহেল চেয়ারম্যান। নগরীতে ফারুকের মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজায় সোহেলের একটি দোকান ও একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। তবে গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সোহেল বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর থেকে তাদের দূরত্ব বাড়ে।

এদিকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি প্রথমে রাজশাহী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চান বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে এলাকায় নানা ধরনের অনুষ্ঠান করেন। পোস্টারও সাঁটিয়েছিলেন। যদিও পরে জানা যায়, মাহিয়া মাহি নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর-নাচোল-ভোলাহাট) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ কথা জানিয়ে নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গত সোমবার ও মঙ্গলবার গণসংযোগ ও পথসভা করেন তিনি।

এর আগে সম্প্রতি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা ঢাকায় ছিলেন। সেখানে নায়িকা মাহির সঙ্গে তাদের দেখা হয়। মাহির সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন সোহেল। এ ছবি দেখে ক্ষুব্ধ হন এমপি ফারুক চৌধুরী।

চেয়ারম্যান সোহেল রানা জানান, মঙ্গলবার উপজেলা কৃষি অফিসের একটি অনুষ্ঠান ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রও মঞ্চে ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে যান গোদাগাড়ীর নয়টি ইউপির চেয়ারম্যানও। তবে এমপির সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব থাকায় তিনি (সোহেল) মঞ্চে ওঠেননি। দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে এমপি তার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাকে দেখেই এমপি বলেন, ‘এই ব্যাটা এই দিকে আয়’। এমপি ডাকায় তিনি সালাম দিয়ে তার দিকে হাত বাড়ান। কিন্তু এমপি তাকে গালি দিয়ে বলেন, ‘নায়িকা মাহি কে? তার সঙ্গে ছবি তুলিস? আমি তোকে দেখে ছাড়ব। তোকে ফিনিশ করে দেওয়া হবে।’

চেয়ারম্যান বলেন, এ ধরনের হুমকিতে আমি আতঙ্কিত। তিনি অভিযোগ করেন, এমপির মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজায় তার রেজিস্ট্রি করা ফ্ল্যাট হলেও সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি ভয়ে সেখানে যেতে পারেন না। এ ছাড়া সেখানে তিনি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই দোকান ছেড়ে দিলেও জামানতের সাড়ে তিন লাখ টাকা ফেরত পাননি।

অন্যদিকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘সোহেল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদককারবারি। তার বাবাও কয়েকদিন আগে হোরোইনসহ ধরা পড়েছে। সে (সোহেল) নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছে। সে আমার কাছে আসছিল। আমি তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। হুমকি-ধমকির কোনো ঘটনা নেই। ফিনিশ শব্দটিও আমি বলিনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *