টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর ভেতরে নানা রকম বিভেদ যে রয়েছে তা স্পষ্ট দৃশ্যমান হয় তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে। জাতীয় কাউন্সিল মানে দল আরও বেশি সংগঠিত হওয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে যখন জেলা উপজেলা কমিটি করা হয়, তখন দ্বন্দ্ব-বিভেদ বরং আরও বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই এ নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দল এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে। অনেক সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান, অনুরোধ উপেক্ষা করেও বিবাদ চলতে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের ভেতরের এ দ্বন্দ্ব-বিভেদ মুছে দিয়েছে রাজনীতির মাঠে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। বিএনপির একের পর এক বিভাগীয় গণসমাবেশ এবং সেসব কর্মসূচিতে লোকসমাগম দেখে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিজেদের মধ্যে বিবাদ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় এবং নিজ দলের অবস্থান জানান দিতে। সর্বশেষ, গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেওয়ার পর পুরো দল দারুণ উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে; ভুলে গেছে যত বিভেদ।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, বড় দলে কোন্দল থাকে। আওয়ামী লীগেও আছে। তবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যেমন বিভেদ ভুলে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, তার কন্যা শেখ হাসিনার ডাকেও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা বলছেন, বহুল আলোচিত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ রুখে দিতে আমাদের নেত্রী যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটি আগে; নিজেদের চাওয়া পাওয়ার হিসাব পরেও করা যাবে।
আজ রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে হবে বিএনপির সমাবেশ। অন্যদিকে আজই রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ সাভারের রেডিও কলোনি মাঠে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ সমাবেশে জেলা সভাপতি বেনজির আহমেদ সভাপতিত্ব করবেন; সঞ্চালনা করবেন পনিরুজ্জামান তরুণ।
অন্যদিকে বিভেদ ভুলে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা। জানা গেছে, দলের নির্দেশে আরও দুদিন আগে থেকেই পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং ধানমন্ডি ৩/এ দলের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়, মধুর কেন্টিন, টিএসসিসহ রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। ঢাকার প্রবেশদ্বার গাবতলীর পাশে মিরপুর মাজার রোডে মাসব্যাপী থাকার অভিপ্রায়ে ‘বিজয় মঞ্চ’ গড়ে অবস্থান নিয়েছেন সাবেক এমপি এবং যুব মহিলা নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন। তার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি স্লোগান সহযোগে অবস্থান করছেন।
রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার উত্তরা ও আবদুল্লাহপুর তথা ঢাকা-১৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নির্দেশে ৬ ডিসেম্বর থেকে অবিরাম কর্মসূচি চলছে। আজ ১০ ডিসেম্বর প্রতিটি ওয়ার্ডে কঠোর পাহারার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন হাবিব হাসান। আরেক প্রবেশদ্বার কেরানীগঞ্জে স্থানীয় এমপি ও বিদ্যুৎ জালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা সবাই সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। ঢাকার ব্যস্ততম প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী মোড়েও দুদিন আগে থেকে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বিএনপির সমাবেশের ভেন্যু যাত্রাবাড়ীর সন্নিকটে হওয়ায় ১০ ডিসেম্বর বাড়তি সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিয়েছে যাত্রাবাড়ী আওয়ামী লীগ। যাত্রাবাড়ী থানার সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না জানান অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি মোটরবাইকের একটা টহল দিনভর থাকবে যাত্রাবাড়ী এলাকাজুড়ে।
এর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের সমন্বয়ে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নেবে। যেখানেই বিশৃঙ্খলা হবে সেখানেই প্রতিরোধ করার নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্র থেকে।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি যে হাত জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে আসবে, সে হাত ভেঙে দেওয়ার মতো কঠোর নির্দেশনাও দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান এ প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে বলেন, আমরা বিএনপি মোকাবিলায় থাকছি না। আমরা সব ধরনের অপশক্তি, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী, যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যারা অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় আসতে চায়- এসব অশুভ শক্তি মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি ও থাকব।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দুর্নীতি ও লুটপাট এবং হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে ‘খেলা হবে’ ফের এমন ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। কাতারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা হবে। লাঠি বা আগুন নিয়ে এলে খেলা হবে। অনেক ছাড় দিয়েছি, আর ছেড়ে দেব না। কাদের বলেন, আজ সকালে ঢাকায় নেমে বুঝলাম- আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। শেখ হাসিনার ডাকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা, শেখ হাসিনার কর্মীরা প্রস্তুত।