ওমানে স্বপ্ন ভাঙলো ৫৬৪ বাংলাদেশির!

সারাবিশ্ব

oman_MMAP_md_528394134

ঢাকা: ভাগ্য ঘোরাতে ওমানে যাওয়া ৫৬৪ বাংলাদেশি শ্রমিকের স্বপ্ন ভেঙে গেছে।

অন্যান্য দিনের মতো রোববার সকালে নিজেদের কর্মস্থল মাস্কট বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাইটে গিয়ে সেখান থেকে পুলিশের হাতে পড়তে হয়েছে তাদের।

লেবার কার্ডে নির্দেশিত কাজের বিপরীতে বিধিবহির্ভূত অন্য চাকরি করার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দেশটিতে আজীবনের জন্য তারা নিষিদ্ধ হতে পারেন।

ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এ কে এম রবিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এসব বাংলাদেশি শ্রমিকদের সামাইল জেলে রাখা হয়েছে। তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

ওমানের স্থানীয় একটি পত্রিকা দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

একই দিন কাজে যাওয়ার পথে বাস থেকে ভারত উপমহাদেশের প্রায় এক হাজার শ্রমিককে আটক করা হয়।

এসব শ্রমিক মাস্কট বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনুমতিহীন একটি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে দিনমজুরের কাজ করতেন।

এ সময় বৈধ শ্রমিকদেরও আটক করা হয়েছে। কারণ, তারা তাদের লেবার কার্ডে উল্লিখিত কাজের বাইরে কাজ করতে সম্মত হন। আটক হওয়া এসব আধাদক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকেরা ভেবেছিলেন, ‘ফ্রি ভিসা’য় আসায় যে কোনো কাজ তারা করতে পাবেন।

এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, আমাদের ‘ফ্রি ভিসা’ বলে পাঠানো হয়েছিল, যাতে আমরা ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারবো বলে জানতাম। প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে এদেশে এসেছি। সে টাকা দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যই অলস বসে থাকার কোনো সুযোগ ছিল না আমাদের।

ওমানে ফ্রি ভিসা সিস্টেমে যে কোনো স্থানে কাজ করা যায়। তবে এর জন্য তাকে মাসিক ন্যূনতম ভাতা পরিশোধ করতে হয়।

সিরাজ প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের কেন শাস্তি দেওয়া হবে? আমরা কী অন্যায় করেছি? ঢাকার এজেন্ট আমাদের ঠকিয়েছে। এখানেও আমরা আমাদের দেশি মধ্যস্থতাকারীদের দিয়ে প্রতিনিয়ত ঠকছি। দেশে সবকিছু বিক্রি করে স্বচ্ছলতার আশায় এদেশে এসেছি। এসব প্রতারকদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন না!

এ সব শ্রমিকদের ঘণ্টায় ৬৫০ বেইজা (এক হাজার বেইজা= ১ ওমানি রিয়াল) করে ভাড়া করা হয়। কাজ পেতে তারা ভোর চারটা থেকে এজেন্টদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

আমরা প্রতিমাসে ১৫০ ওমানি রিয়াল আয় করে থাকি। কিন্তু থাকা, খাওয়া মোবাইল ফোন বিল এবং স্পন্সরদের খরচ দিতেই চলে যায় ৮০ রিয়েল। আর কত বাকি থাকে? কীভাবে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারি? কীভাবেই বা ঋণ শোধ করবো, যা মোটা অঙ্কের সুদে ধার নিয়েছিলাম?

আটক হওয়ার আগ মুহূর্তে আরেক বাংলাদেশি শ্রমিক শামসুদ্দিন এ সব কথা বলেন।

এসব শ্রমিকদের ঘণ্টাপ্রতি পারিশ্রমিক এক ওমানি রিয়াল। কিন্তু তার ৫০ ভাগ দিতে হয়, কাজ খুঁজে দেওয়া এজেন্টদের।

অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারেরও এসব অভিবাসী শ্রমিকদের রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ সানাউল্লাহ নামে এক বাংলাদেশি সমাজ কর্মী। এছাড়া বিদেশ আসার আগে শ্রমিকদেরও সচেতন হওয়ার প্রতি জোর দেন তিনি।

ওমানে শ্রম বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কিছুদিন পর পরই এ ধরনের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সরকার। গত এপ্রিলে আটশয়েরও বেশি শ্রমিককে আটক করা হয়।

ওমানের সরকার তিনমাসের ‘অ্যামনেস্টি’ ঘোষণা করেছে। এর আওতায় দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকরা কোনো ধরনের জেল, জরিমানা ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে দেশে ফিরতে পারবেন। মে মাসের তিন তারিখ থেকে শুরু হওয়া এ ‘অ্যামনেস্টি’ চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।

বাংলাদেশের অন্যতম এই শ্রম বাজার ওমানে বর্তমানে ১৫ হাজারের মতো অবৈধ বাংলাদেশি আছেন বলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *