মাহফিলের খিচুড়ি খেয়ে অসুস্থ শতা‌ধিক, একজনের মৃত্যুতে এলাকায় আতঙ্ক

Slider জাতীয়


টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের গজিয়াবাড়ি গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের তবারক খেয়ে শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকালে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম রাহেলা খাতুন (৬৮)। তার স্বামীর নাম বিশু চৌধুরী। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, গত রোববার (১৩ নভেম্বর) রাতে গজিয়াবাড়ি গ্রামের আক্কাস আলীর বাড়িতে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ওই মাহফিলে গ্রামের দুই থেকে প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। মাহফিল শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে অংশ নেওয়া গ্রামবাসীদের তবারক হিসেবে পলিথিনের প্যাকেটে মোড়ানো খিচুরি খেতে দেয়া হয়। খিচুড়ি খেয়ে সবাই রাতে ভালোভাবে বাড়ি ফিরেন।

পরদিন সোমবার (১৪ নভেম্বর) সকাল থেকেই ওই খিচুড়ি খাওয়া লোকজনের মাঝে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে গ্রামের প্রায় শতাধিক লোক ডায়রিয়ায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন। সাধারণত শারীরিকভাবে অসুস্থতা মনে করে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে থেকেই খাবার স্যালাইন ও পেটের অসুখের ওষুধ খান।
মঙ্গলবার রাত থেকে ডায়রিয়া ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের বহু মানুষ গণহারে আক্রান্ত হন। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় অনেককে দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বুধবার সকালে গাজিয়াবাড়ি গ্রামের রাহেলা খাতুন (৬৮) নামে বৃদ্ধা মারা যান। এ ঘটনায় গ্রামে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা হাসপাতালের একটি দল নিয়ে ওই গ্রামে আসেন। তারা ওই গ্রামের ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেন। এছাড়া স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে ডায়রিয়া আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সরোয়ার হোসেন বলেন, ওয়াজ মাহফিল শেষে রাতে খাবার দেয়া হয়। খাওয়ার পর একদিন ভালই ছিলাম। মঙ্গলবার রাত থেকে পেটে মোচড় দিতে শুরু করে। গভীর রাতে অন্তত ১০ বার বাথরুমে গিয়েছি। পলিথিনে মোড়ানো খাবার খেইে ডায়রিয়া হয়েছে। গ্রামের প্রায় সবাই আক্রান্ত হয়েছে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হাসিনা আক্তার বলেন, তবারক খাওয়ার সময় নষ্ট মনে হয়নি। কিন্তু খাওয়ার পর এ অবস্থা হবে বুঝিনি। রাত থেকেই পেট ব্যথা করে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি।

আটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গজিয়াবাড়ি গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ওয়াজ মাহফিলের খিচুরি খেয়ে সবাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। খাবার ওই দিন সকালে রান্না করা হয়েছিল। পলিথিনে মুড়িয়ে রেখে রাতে খাবার দেয়া হয়। খাবার নষ্ট হওয়ার কারণে এ ধরণের সমস্যা হতে পারে।

দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফজলুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে আমাদের সব সদস্য নিয়ে গ্রামের সবাইকে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছি। দীর্ঘ সময় খাবার পলিথিনে রাখার কারণে বিষক্রিয়া তৈরি হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাক্তার আশরাফুল আলম বলেন, ধর্মীয় মাহফিলে খিচুড়ি খেয়ে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় গ্রামের শতাধিক লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। খবর পেয়ে কয়েকজন মেডিকেল অফিসার, নার্স নিয়ে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। অনেকেই পানিশূন্যতায় ভুগছে। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদের হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আক্রান্তদের মাঝে খাবার স্যালাইন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *