আগামী বছর থেকে ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম

Slider শিক্ষা

সারাদেশের সব বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের সাহায্যে পাঠদান চালু হতে যাচ্ছে। মূলত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর আলোকে এই পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আজ শনিবার থেকে জেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রথম ব্যাচের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। ঢাকা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ছয় দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে এরই মধ্যে এনসিটিবি মনোনীত শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এনসিটিবি-সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষাসহ মোট ১০টি বিষয় রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ক্লাসের ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে শিখন ফল তৈরি করা হবে শিক্ষার্থীদের। যদিও এর মধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হিসেবে যারা কর্মরত আছেন, তাদের অনেকেই বাস্তবিক নানা কারণে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নন। এমনিতে যে কোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী শিক্ষকরাই ওই বিষয়ে ক্লাস নেবেন এতদিন তেমনটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষকরা অনেক সময় ইংরেজি পড়াচ্ছেন বা কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষক পড়াচ্ছেন গণিত। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হলেও বিভিন্ন বিষয় পড়ানোর জন্য একটি বিষয়ে একাধিক শিক্ষক থাকতে হবে। এ জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকশূন্যতা পূরণ করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলার শিক্ষকদের পাঠদানের বিষয় হবে বাংলা। ইংরেজি শিক্ষকদের ইংরেজি, গণিত শিক্ষকদের গণিত, ভৌতবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষকদের বিষয় হবে বিজ্ঞান। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পড়াবেন ভূগোল শিক্ষকরা। আবার ভৌতবিজ্ঞান বা আইসিটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিষয় হবে ডিজিটাল প্রযুক্তি। কৃষি ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকদের পাঠদান করতে হবে ওই দুই বিষয়ে। শারীরিক শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষকদের নতুন বিষয় হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষকরা পড়াবেন ধর্মশিক্ষা। চারু ও কারুকলা বিষয়ে শিক্ষকদের নতুন বিষয় হবে শিল্প ও সংস্কৃতি।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিতের তাগিদ দেন শিক্ষাবিদ ড. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকদের এমনিতেই ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকার তো প্রশ্নই আসে না। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে অন্য ধরনের সমস্যা। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর এবং অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অঞ্চলে অবস্থিত সরকারি বিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক। কিন্তু গ্রাম এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম। তার ওপর খোদ রাজধানীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক ধরন অনুসারে শিক্ষক পদায়ন করা নেই। এসব বিদ্যালয়ে এক বিষয়ের শিক্ষক আরেক বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এখানে নতুন শিক্ষাক্রম কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সন্দিহান খোদ শিক্ষকরাই।

মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা প্রশিক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণবিহীন কোনো শিক্ষক আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর আর ক্লাস নিতে পারবেন না। ডিসেম্বরের আগেই ঢাকার স্কুলগুলোর শিক্ষকদের বিষয় সমন্বয় করা হবে।

যদিও পাইলট প্রকল্পের আওতায় এখন মাত্র ৬২ স্কুলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের একটি নমুনা দেখানো হচ্ছে। যদিও প্রথম দিকে ১০০টি করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাছাই করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটি সম্ভব হয়নি। এখন মাত্র ৬২টি স্কুলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ৩৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক সঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। আমাদের নতুন কারিক্যুলাম তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সেটি পাইলটিং (পরীক্ষামূলক) চলছে। তার ফিডব্যাক অনেক ভালো। ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করা যতটা সহজ, ৩৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেটি বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। কারণ এতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রায় চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ শিক্ষকরা এত দিন যে আঙ্গিকে পাঠদান পরিচালনা করেছেন, এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে তাদের শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সে জন্য শিক্ষকদের প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে এ কার্যক্রম অনেক সময়সাপেক্ষ। ফলে শিক্ষক প্রশিক্ষণে অনুমেয় সময় বেশি ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *