প্রজনন মৌসুম শেষে ইলিশ ধরতে নেমে কাক্সিক্ষত পরিমাণ মাছ পাননি জেলেরা। তবে এই বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। সেখানকার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আশরাফুল আলম জানিয়েছেন, এই বছর ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। ফলে সামনের মৌসুমে ইলিশের আহরণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসন্ন মার্চ-এপ্রিল জাটকা মৌসুমে ইলিশের পোনার শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়েও কিশোর ইলিশকে সাগরে অবাধে বিচরণের সুযোগ করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, প্রতিবছরই মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৬ সালে ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪৬ দশমিক ৪৭, ২০১৮ সালে ৪৭ দশমিক ৭৫, ২০১৯ সালে ৪৮ দশমিক ৯২ এবং ২০২০ সালে ৫১ দশমিক ২, ২০২১ সালে ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এই বছরে ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ দশমিক ২৪ ভাগ বেশি।
সূত্র আরও জানায়, দেশের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার নদনদীতে এবার প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ৫শ ১৫ কেজি ইলিশের ডিম উৎপাদিত হয়েছে। ফলে ৪০ হাজার ২শ ৭৬ কোটি জাটকা যুক্ত হবে। যা গত বছর ছিল ৩৯ হাজার ৩১৬ কোটি। এতে করে এ বছর ২ দশমিক ৪ শতাংশ ইলিশের পোনা জাটকা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ইলিশ মাছ পরিভ্রমণ স্বভাবের। প্রজননের সময়ে ইলিশ সাগর ছেড়ে মোহনা ও নদনদীতে ছুটে আসে। প্রজননের মৌসুমে ইলিশের অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। চলতি বছর সঠিক সময় ইলিশের প্রজনন মৌসুম ঘোষণা করায় এবং নদী সুরক্ষিত থাকায় ও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আমাদের আরও আশান্বিত করে তুলেছে। আমরা আশা করছি, এ বছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হবে।
এবারের প্রজনন মৌসুম সফল হয়েছে দাবি করে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জেলা টাস্কফোর্স, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় মৎস্য বিভাগের সঙ্গে জড়িতরা প্রজনন মৌসুমে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। সম্মিলিত কার্যক্রমের ফলে এ বছর অভিযানও সফল হয়েছে। তাই আশা করছি, এর সুফল আগামীতে এ দেশের মানুষ পাবে।
উল্লেখ্য, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা ও অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে নদীতে ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। এ সময়টাতে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেবে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের ৬টি উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করে সরকার। এরপরও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় একশ্রেণির অসাধু ও মৌসুমে জেলে অবাধে নিধন করে মা ইলিশ।