পাহাড়ের নিচে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে লাল শাপলা

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


এক পাশে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, অন্য পাশে সীমান্তঘেঁষা সবুজে আবৃত কাঁশতলা গ্রাম। তার মাঝখানে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত লাল রঙে রঙিন হয়ে আছে পুরো এলাকা। পূব আকাশে ভোরের সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে লাল রঙে ছেঁয়ে যায় চারপাশ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে হাওরের বুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিছিয়ে রাখা হয়েছে লালগালিচা।

এই দৃশ্য সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাঁশতলা গ্রামের বিকিবিলের। হাওরের বুকে হাজার হাজার রক্ত রাঙা লাল শাপলার সুধা পান করতে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

সিলেট থেকে ঘুরতে আসা আরিফ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে এই বিলের নাম শুনেছি। তাই দেখতে এলাম। খুবই সুন্দর পরিবেশ। চারপাশে শুধু লাল। যতটুকু শুনেছি তার থেকে বেশি সুন্দর।

নববিবাহিত দম্পতি জাফর-বীণা। জাফর আহমেদ বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। সে খুব এনজয় করছে। নীল পাহাড়ের নিচে লাল শাপলা। মনে হবে কেউ লাল গালিচা বিচিয়ে রেখেছে। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ। আমি সবাইকে এসে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।

তবে এই দৃশ্য শুধু বিকিবিলে নয়, সুনামগঞ্জের প্রায় হাওরের দৃশ্যই এখন এমন। বিকিবিল যাওয়ার পথেও সড়কের দু পাশে হাওরে দেখা মিলবে ছোট-বড় শাপলার গালিচা।

তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি) ও শিমুল বাগানের সৌন্দর্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে অনেক আগেই। এখন নতুন করে যোগ হচ্ছে জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো। তার মধ্যে অন্যতম লাল শাপলার বিকিবিল। এলাকাজুড়ে এখন ফুটে উঠেছে লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য। বর্ষার শুরুতেই এখানে শাপলার জন্ম হলেও হেমন্তের শেষ শিশিরভেজা রোদ মাখা সকাল পর্যন্ত জলাশয়ে চোখে পড়বে শাপলার বাহারি রূপ।

তবে স্থানীয় গবাদি পশুর গোখাদ্যের চাহিদা মেটাতে গাছসহ কেটে নিয়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে শাপলা। কৃষকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব নষ্ট হওয়ার চেয়ে গরু-মহিষকে খাওয়ানো ভালো।

স্থানীয় যুবক নুর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাহিরপুর থানার সবচেয়ে সুন্দর বিল এটি। কিন্তু আমাদের স্থানীয়রা গরু-মহিষের জন্য শাপলা তুলে নিয়ে যাওয়ায় সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কৃষক শহিদ মিয়া বলেন, এই ফুল এমনিতেই নষ্ট হয়ে যাবে। এখানে ধান রোপণ করা হয়। নষ্ট হওয়ার চেয়ে আমরা গরু মহিষকে খাওয়াই।

২০১৯ সালে বিকিবিলকে জেলা প্রশাসন থেকে পর্যটন স্পট হিসেবে ঘোষণার পর মানুষের সমাগম হলেও পর্যটনবান্ধব উদ্যোগ ও প্রচারের অভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে দর্শনার্থী। দুর্গম এলাকা সুনামগঞ্জের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা গেলে বেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। টাঙ্গুয়ার হাওর ও শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদীর মতো লাল শাপলার বিকিবিলও হয়ে উঠতে পারে পর্যটনের সম্ভাবনাময় একটি জায়গা।

মনিরুল আলম সাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, জায়গটা খুবই সুন্দর। ঘুম থেকে উঠেই এমন একটা পরিবেশ দেখলে সারা দিন ভালো যেতে বাধ্য। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরেকটু উন্নতি হলে ভালো।

হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা সুনামগঞ্জের সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, বিকিবিল পর্যটনের এক নতুন সম্ভাবনা। এই যে ভ্রমণ পিপাসুরা আসে তারা যেন সৌন্দর্যকে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে সেজন্য আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। পরিবেশ যেন নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, পর্যটক বসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং নৌকা থাকতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সকল পর্যটন স্পটকে হাইলাইট করতে চাই। সবার আগে রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন দরকার। বন্যায় আমাদের রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে তা মেরামত করার কাজ শুরু করেছি। রাস্তাঘাট ভালো হয়ে গেলেই বিকিবিলে প্রচুর পর্যটক আসবে। বিকিবিলকে তুলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাব। সেখানে যেন পর্যটক কিছু সময় বসতে পারে আস্তে আস্তে সেই ব্যবস্থাও করে দেবো।

যেভাবে যাবেন বিকিবিলে

ঢাকার বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে করে আসতে হবে সুনামগঞ্জ শহর। বাস ভাড়া ৮২০ টাকা। শহর থেকে সরাসরি মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটোরিকশা করে বিশ্বম্ভপুর উপজেলার মিয়ারচর ঘাট হয়ে যাদুকাটা নদী পেরিয়ে যাওয়া লাগবে বিকিবিলে। জন প্রতি ভাড়া পড়বে ১৫০-২০০ টাকা। এছাড়া সরাসরি না গিয়ে ভেঙে ভেঙে যাওয়া যাবে। এরপর বিল ঘুরে দেখার জন্য নৌকা ভাড়ায় নিতে হবে। ঘণ্টা প্রতি ভাড়া পড়বে ২০০-৩০০ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *