জন্মনিবন্ধন নম্বরই এনআইডি নম্বর

Slider জাতীয়

জন্মের পরই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার বিধান রেখে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২২র খসড়া শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে এ আইন অনুযায়ী এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে চলে যাবে।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইন অনুমোদন পায়। বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বৈঠকের পর সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

সচিব বলেন, ‘আগের আইনটি (জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০) ২০১০ সালের। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কাছে ছিল। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এটা সরকারের কাছে নিতে চাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার আইডি নিয়ে শুরু হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে এটা এনআইডি হিসেবে রূপান্তর করা হয়। তখন বেসিক কনসেপ্ট ছিল নির্বাচনসংক্রান্ত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন এনআইডিতে রূপান্তর হলো তখন এটার সঙ্গে অন্যান্য কর্মসূচি যোগ করা হলো।’

সচিব বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে এ জন্য এটা (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো সরকারের সরাসরি তত্ত¡াবধানে থাকা। কারণ নির্বাচন কমিশন সব ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। সে জন্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (এনআইডি সেবা) সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা পাসপোর্টটা হ্যান্ডেল করে।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আলটিমেটলি একটা ইউনিক আইডিতে চলে যাচ্ছে। আজ মন্ত্রিসভা বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে, আমি ওই জাতীয় একটা কমিটির সভাপতি, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যে নিবন্ধনটা হবে, আলটিমেটলি আজ থেকে ৫-৬ বছর পর, ওই নম্বরটাই সব জায়গায় যাবে। সে জন্য পাসপোর্টের সঙ্গে একটু সিনক্রোনাইজ করে জন্মের সময় নম্বরটা দিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের (বয়স্কদের) ক্ষেত্রে এটা পারা যাবে না, আমরা তো ইতোমধ্যে জন্মগ্রহণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘হয়তো আগামী তিন-চার বছর পর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের দৃষ্টি, মুখচ্ছবি সবই দিয়ে দেওয়া হবে এবং মোডিফিকেশন হবে। আমরা বয়স্ক, আমাদের মোডিফিকেশন লাগবে না, আমাদের একবার দিলেই হবে। এ জন্য এটা সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।’

মন্ত্রিসভা খসড়া আইনটি পর্যালোচনা করা দরকার মনে করে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘কারণ আগের আইনে ৩২টি ধারা ছিল, সেটা থেকে কমিয়ে ১৫টি করা হয়েছে, অনেকগুলো ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে মন্ত্রিসভা সম্মত হয়নি। বলেছে, এটা রিভিউ করা জন্য।’

‘একটা উদাহরণ দিই- ৬ বা ৭টি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা দণ্ড ছিল, এ আইনে সবগুলো এক সঙ্গে করে সাত বছর কারাদণ্ড করা হয়েছে। ছোট অপরাধের জন্য তো সাত বছরের কারাদণ্ড হবে না। সেজন্য এগুলোকে আলাদা করে রেখে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আরও কিছু বিষয় ছিল। যেমন- অন্যান্য কাজেও এনআইডি ব্যবহার করা যাবে। এ ধারাগুলো নতুন খসড়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। সেজন্য মন্ত্রিসভা বলেছে, এগুলোকে পর্যালোচনা করে আগের যে ৩২টি ধারা, সেই অনুযায়ী করে, যদি দরকার হয় দু-একটি ধারা বাদ বা যোগ করার দরকার হয়, সেটা ভিন্ন বিষয়। এটা নিয়ে লেজিসলেটিভ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে আমাদের (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) সঙ্গেও কথা বলে এটাকে যথাসম্ভব ওই ৩২টি ধারার মতো আইন করতে বলা হয়েছে।’

এনআইডি কবে নাগাদ সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইন চ‚ড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখন যেভাবে আছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকবে।’

নতুন ব্যবস্থায় কারা ভোটার আইডি পাবে, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভোটার আইডি ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের দেওয়া হয়। এখন একটা ডাটাবেজ করে, ইন্টার-অপারেটিবিলি (আন্তঃসংস্থা যোগাযোগ), ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যাবে। তারা (নির্বাচন কমিশন) চাইলে নিতে পারবে, আলাদা ডাটাবেজও করতে পারবে। পাসপোর্ট বা অন্য যে কোনো কিছু করার জন্য সবার (অন্যান্য সরকারি সংস্থার) ওই ডাটাবেজে ওয়ার্কিং এন্ট্রি থাকবে।

এনআইডি কারা পাবেন জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এনআইডি হয়ে যাবে। এই আইনটা হওয়ার পর।’

আইনটা হতে কত দিন লাগবে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আর এক মাস লাগবে এটা মন্ত্রিসভায় চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আসতে।’

আগামী নির্বাচনের আগে আইনটি চূড়ান্ত হবে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করবে।’

কার্যক্রম কীভাবে সম্পন্ন করা হবে, সেজন্য আইনের অধীনে পরবর্তী সময়ে বিধি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

জন্মনিবন্ধন ব্যবস্থাও কি সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে চলে যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে আলোচনা করে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে বলা হয়েছে। জন্মের সময় যে নিবন্ধন হবে, সেই নম্বরটা যাতে সব জায়গায় থাকে। আইন ও বিধি হলে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। আপাতত যেভাবে আছে সেভাবে চলবে।

নির্বাচন কমিশন এনআইডি সেবা সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘না, এটা পয়েন্ট আউট হয়নি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *