মানবপাচারঃ মেদানে সাঁতার কেটে বাঁচল ৯৬ বাংলাদেশি

সারাবিশ্ব

manob_pachar_m4_banglanews2_494303381

কুয়ালালামপুর: ইন্দোনেশিয়ার মেদান রাজ্যের লাংকাত এলাকার তানজুংপুরা উপত্যকা থেকে ১৬৮ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছেন জেলেরা। এদের মধ্যে ৯৬ জন বাংলাদেশি বলে জানা গেছে।

এসব ঘটনার বিবরণ দেন প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ রানা। তিনি বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় সপরিবারে বসবাস করছেন।

তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো গত ১৪ মে তানজুংপুরায় তিনি তার দোকানে যান। এ সময় স্থানীয়রা তাকে জানান, ৪-৫ মাইল দূরে সৈকতের তীরে প্রচুর বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে জেলেরা। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ কথা শুনে দোকান বন্ধ করে সে স্থানে পৌঁছান।

মাসুদ রানা জানান, ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় প্রলয়ঙ্করী সুনামি আঘাত হানার পর সেখানে প্রচুর সংখ্যক রিলিফ সেন্টার তৈরি করা হয়। তানজুংপুরা উপত্যকা থেকে উদ্ধার করা ১৬৮ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাকে একটি রিলিফ সেন্টারে আশ্রয় দেওয়া হয়।

রিলিফ সেন্টারে দেখা যায়, ব্যাথায়, ক্ষুধায়  কাতরাচ্ছেন হতভাগ্য মানুষগুলো। অনেকের হাত, পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। ক্ষুধা ও আঘাতের যন্ত্রণায় কথা বলে পারছেন না অনেকে।

একের পর এক ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় করুণ অভিজ্ঞতার কথা। তারা জানান, প্রায় পনেরো দিন আগে তাদের নৌকাটি থাইল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে থাই পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর সেই পুলিশ বাহিনী তাদের নৌকার ইঞ্জিন বিকল করে দেয় এবং কম্পাস নষ্ট করে মাঝ সমুদ্রে ছেড়ে দেয়।

নৌকাটি তিন মাস দশদিন পর মালয়েশিয়ার তীরে পৌঁছালেও ভিড়তে দেয়নি মালয়েশিয়ার নেভি সদস্যরা। উল্টো তারা নৌকাটি ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় ছেড়ে দেয়।

সবশেষ নৌকাটি ইন্দোনেশিয়ার মেদানের তানজুংপুরা তীরের কাছাকাছি পৌঁছালে অনেকে সাঁতরে তীরে ওঠেন। অনেকে আবার তেলের ড্রামে উঠে কাছাকাছি নৌকায় পৌঁছান। নৌকাটিতে প্রায় এক হাজার মানুষ থাকলেও মাত্র ১৬৮ জন তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন।

ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে মাসুদ রানা জানান, অনাহারে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় পথেই দু’শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। অনেকে আবার ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব লোকদের সংগ্রহ করে মানবপাচারকারীরা। জাহাজে ওঠার পর টাকা, দালালদের এমন আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে অনেকে জমিজমা বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করেন। মহেশখালীতে এসব লোকদের একত্রিত করে নৌকায় ওঠানো হয়।

মাসুদ রানা জানান, দালাল গ্রুপের প্রধান চট্টগ্রামের সেলিম। অনেকে তাকে ডাকু সেলিম নামে চেনেন। তার নেতৃত্বেই চলে প্রতারণার এ খেলা। যার ঘাঁটি মহেশখালি।

সমুদ্রপথে নৌকায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের মধ্যে সংর্ঘষে অনেক মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। শুধুমাত্র গ্রামের নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীও নৌকাটিতে রয়েছেন বলে জানান মাসুদ রানা।

নৌকায় থাকা হতভাগ্য কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন,আব্দুল রহিম-পাবনা–০১৭৩৬২১৩৫৯৪, সাহেব আলি–যশোর-০১৭৭৫২০৭৭৫১, সহিদুল ইসলাম-কক্সবাজার-০১৮৩৮৬২৮৩৭০, মামুন-চুয়াডাঙা-০১৭১৯৮১৭৮১৮, মুঞ্জুরুল-নরসিংদি-০১৭৬৩২২৯৮০৬, বুড্ডু মিয়া-সিরাজগঞ্জ-০১৭৩৫৬৬৪৮৯৬, নজরুল-বগুড়া-০১৭৯৩১১৭৪৯৫, কেরামত আলি-বগুড়া-০১৭৭০৮৯৪১৭০, মিজান-নরসিংদি-০১৭৫৫০০৪৬৮৬, মাসুদ-কুষ্টিয়া-০১৯৪০২০৮১৯৭, ইলিয়াস শেখ-মাদারীপুর-০১৯৬৩৩০০৮০৩, রাকিব-রায়পুরা-০১৭৮২২৬৭৭৬৯, ফরিদ-ঢাকা-০১৯১০২৮৮৭১০।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সবাইকে ইন্দোনেশিয়ার মেদান ইমিগ্রেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *