একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে তেরোটি উদ্দেশ্য, ঊনত্রিশটি প্রান্তিক যোগ্যতা, একশত ঊনআশিটি বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা, এক হাজার সাতশত নব্বইটি শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা, তিন হাজার তিনশত নব্বইটি শিখনফল নিয়ে আমাদের যে যোগ্যতাভিত্তিক পাঠ্যক্রম রয়েছে তা অর্জন করার লক্ষ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে সর্বপ্রথম যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। দেশের সকল বিদ্যালয়গুলোতে এই শিক্ষাক্রমের আলোকে ১৯৯২ সালে প্রথম শ্রেণিতে এবং ১৯৯৬ সালে পর্যায়ক্রমে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু হয়।
একজন শিক্ষার্থী কোন শ্রেণিতে কোন বিষয়ে কি কি যোগ্যতা র্অজন করবে তা নিদ্রিষ্টি করে দেয়া আছে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে আর সে যোগ্যতাগুলো শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ ও মানসিক পরিণমন করইে নির্ধারণ করা হয়। আর সেই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের আলোকেই একজন শিক্ষক পাঠদান করে থাকনে। ১৯৯২ সাল থেকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যপুস্তক রচতি ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হলেও মূল্যায়ন পদ্ধতি ছিল গতানুগতিক । ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমকি শিক্ষায় চালু করা হয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। ২০১২ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ১০% প্রশ্ন করা হয় যোগ্যতাভিত্তিঈ এর আলোকে, ২০১৩ সালে ২৫%, ২০১৪ সালে ৩৫%, ২০১৫ সালে ৫০%, ২০১৬ সালে ৬৫%, ২০১৭ সালে ৮০%, ২০১৮ সালে থেকে ১০০% যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন এর আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হয়। ২০১৮ সালে প্রাথমকি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের কাঠামোর পরিবর্তন করা হয়। সেখানে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন বাদ দিয়ে নতুন কাঠামোর আলোকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে মূল্যায়ন করা হয়। ২০১৩-২০১৪ সালে দেশের সকল উপজলো/থানা রিসোর্স সেন্টারগুলোতে একযোগে সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ০৩ দিনব্যাপী Competency based items development marking and test administration বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় যখন ১০০% যোগ্যতাভিত্তিক এর আলোকে প্রশ্ন সংযোজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তখন সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১০০% যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন সংযোজিত বিষয়গুলো অবহিত করার লক্ষ্যে পুনরায় উপজলো/থানা রিসোর্স সেন্টারগুলোতে Competency based items development marking and test administration বিষয়ক প্রশিক্ষণ এর আয়োজন করা হয় এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সেক্ষেত্রে অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকগণ একই প্রশিক্ষণ পুনরায় করার সুযোগ পান। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম, শিখনের ক্ষেত্র এবং সেই শিখনের ক্ষেত্রের আলোকে কিভাবে যোগ্যতাভিত্তিক পাঠদান করবেন, কিভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করবেন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন তা বার বার জানার সুযোগ লাভ করেন।
একজন শিক্ষক যদি যোগ্যতাভিত্তিক শিখনের ক্ষেত্রের আলোকে তথা জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগের আলোকে পাঠদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার আলোকে প্রশ্ন করে উত্তর প্রদানে ও লিখতে অভ্যস্ত করে তুলেন তাহলে শিক্ষার্থীদের শিখন স্থায়ীত্ব লাভ করবে এবং তারা মূল্যায়ন পর্বে ভালো করবে পাশাপাশি তাদের নীতি নৈতিকতার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। একজন শিক্ষক পাঠদানের সময়ই যদি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগের আলোকে বারবার প্রশ্ন করেন তাহলে শিক্ষক নিজেই বুঝতে পারবেন তার শিক্ষার্থীর শিখনের কোন ক্ষেত্রে কতটুকু পারগতা অর্জন করতে পেরেছে। শিক্ষক তার যোগ্যতাভিত্তিক পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে যদি বোঝাতে সক্ষম হন তাহলেই শিক্ষার্থী জ্ঞানের আলোকে বলতে ও লিখতে পারবে যে কি হয়েছে, জ্ঞান ও অনুধাবনের আলোকে বলতে ও লিখতে পারবে কেন হয়েছে জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগের আলোকে বলতে ও লিখতে পারবে যে, সে হলে কি করবে। শিক্ষকই বুঝবেন যে তিনি শিখনের কোন ক্ষেত্রে যাচাই করার জন্য প্রশ্ন করছেন কিন্তু শিক্ষার্থীর কাছে মনে হবে তা কেবল প্রশ্ন। তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষকের প্রয়োজন সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে গতানুগতিক ধারায় না থেকে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত জ্ঞান প্রয়োগের মনমানসিকতার।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও গণিত বিষয়ে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বাংলা ও গণিত বিষয়ে তৃতীয় শ্রেণির ৩০ টি বহু নির্বাচনী ও ৫ টি কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন থাকবে এবং ৫ম শ্রণেরি ৩৫ টি বহুনির্বাচনী ও ৫ টি কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন থাকবে। সবকটি প্রশ্নই থাকবে যোগ্যতাভিত্তিক এর আলোকে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজলো রিসোর্স সেন্টার, সদর, গাজীপুর এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ, প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও বাংলা, গণিত বিষয়ের দুইজন সহকারি শিক্ষকদের জাতীয় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ২০২২ এর প্রস্তুতি বিষয়ে ওরিয়েন্টেশেন প্রদান করা হয়। সেখানে নির্দেশনা মোতাবকে যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়ন কাঠামো সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
অতীতের সকল বাধা বিপত্তি ও কোভিডকালীন প্রভাব কাটিয়ে আমরা যদি প্রাথমিক শিক্ষাকে মানোন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌছাতে চাই তাহলে ১০০% যোগ্যতাভিত্তিকের আলোকে পাঠদানের কোন বিকল্প নেই। যোগ্যতাভিত্তিক পাঠদানই পারে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার আলোকে শোনা, বলা, পড়া লেখায় অভ্যস্ত করতে আর এভাবে অভ্যস্ত হলেই আমরা পারব জাতীয় শিক্ষাথীর মূল্যায়ন ২০২২ এ আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে।
ফারজানা ববী
সহকারী ইন্সট্রাক্টর
উপজেলা রিসোর্স সেন্টার
সদর, গাজীপুর