ঢাকা: মারামারি, হাতাহাতি আর বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ছাত্র সমাবেশ।
শনিবার (১৭ মে) বিকেলে রাজধানীর শহীদ মিনারে এ ছাত্র সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। কৌশলে সমাবেশ শেষ করতে পারলেও হয়নি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিকেল ৩টার ওই ছাত্র সমাবেশ শুরুর আগেই হয়ে গেছে দুই দফা সংঘর্ষ। সমাবেশ শুরুর পর থেকে পৌনে ৬টায় শেষ হওয়া পর্যন্ত চারবার ও সমাবেশ শেষে যাওয়ার সময় একবার মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসব আক্রমণ-সংঘর্ষে আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার খবর পাওয়া গেছে।
এরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নেতা আরিফুরজ্জামান রোহান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ সিকদার, বঙ্গবন্ধু হল শাখার কর্মী বরিকুল ইসলাম বাঁধন এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সম্পাদক তুহিন। এছাড়াও অনেকের গায়ের পোষাক টেনে ছেঁড়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী সমাবেশ শুরু কথা ছিল বিকেল ৩টায়। সরেজিমিন দেখা যায়, দুপুর একটা থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে সমাবেশস্থলে।
দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশস্থলে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ও সিদ্ধেশ্বরী শাখা ছাত্রলীগ। সামনের সারিতে বসাকে কেন্দ্র করে এই দুই শাখার নেতাকর্মীদের মধ্যে কাটাকাটি সৃষ্টি হয়। এতে সংঘর্ষের আশঙ্কায় উপস্থিত অনেকেই ছোটাছুটি করে অন্য দিকে চলে যায়। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
একই কারণে (সামনে বসাকে কেন্দ্র করে) বেলা ২টার দিকে মাস্টারদা’ সূর্যসেন হল শাখা ও ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও হাতাহাতি হয়।
বিকেল ৩টায় (সমাবেশ শুরু আগ মুহূর্তে) একই কারণে আবার ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক রানার সমর্থক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিফাত জামান ও সাধারণ সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয় কৌশলে তা নিবৃত্ত করেন।
প্রায় একই সময়ে অমর একুশে হল শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুজ্জামান মিরাজের নেতৃত্বে ওই হলের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রোহানকে মারধর করেন।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা ও নেত্রকোনা জেলা শাখার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ওঠার পথে ছাত্রলীগ নেতাদের বাধার সম্মুখীন হন। তার পরও তারা স্লোগান দিতে দিতে বেদির দিকে এগিয়ে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এরপর হাতাহাতি হয় ঢাকা কলেজ ও তিতুমীর সরকারি কলেজ শাখা নেতাকর্মীদের মধ্যে।
সমাবেশ শেষে বিকেল সোয়া ৬টার দিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক রানা তার সমর্থকদের নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কির জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ ও বঙ্গবন্ধু হলের কর্মী বাঁধনকে মারধর করে। এই ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুহসিন হলের নেতা-কর্মীরা রানার সমর্থকদের ধাওয়া করে মহানগর উত্তরের যুগ্ম সম্পাদক তুহিনকে ধরে পেটান।
সংঘর্ষের বিষেয়ে জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল নাহিয়ান খান বলেন, মারামারির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর মধ্যে বসা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সমাবেশস্থলে মারামারির ঘটনা ধামাচাপা দিতে মাইকে জোরে জোরে হাত তালি দিতে বলেন। নিজেও হাততালি দেন। এ বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সাড়া পাওয়া যায়নি।
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, মারামারি বা সংঘর্ষের মত কিছু ঘটে নাই। তুলনামূলক বেশি নেতাকর্মীর উপস্থিতির ফলে সামনে বসা নিয়ে একটু বাকবিতণ্ডা হয়েছে। সামনে সম্মেলন, সবাই তো নিজের অবস্থান তুলে ধরতে চায়।
এদিকে পোস্টার, ব্যানার ও মিডিয়াকে দেওয়া দাওয়াতপত্রে সমাবেশের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা হয়নি। এমন বিশৃঙ্খল অবস্থায় বক্তৃতা পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই সমাবেশের সমাপ্তি টানেন ছাত্রলীগের সভাপতি।
বিশৃঙ্খল এই সমাবেশে বক্তৃতা করেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, সাবেক সাংসদ ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদার, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।