জাতীয় শোক দিবসে শিবিরের তথাকথিত ‘ইসলামি শিক্ষা দিবস’

Slider রাজনীতি


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এ দিনটি বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে বেদনার একটি দিন। আর এই দিনটিকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির ‘১৫ আগস্ট ইসলামী শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালনের কর্মসূচি দিয়েছে । যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

শিবিরের এমন কর্মসূচিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা দূরাভিসন্ধিমূলক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে শিবিরের এ ধরনের কর্মসূচি স্বাধীন বাংলাদেশকেই অস্বীকার করার সামিল। এদের আইন করে চিরতরে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। নাহলে ভবিষ্যতে এরা এমন আরও অনেক দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাবে।

জানা গেছে, ছাত্র শিবির জাতীয় শোক দিবসে তাদের তথাকথিত ‘ইসলামী শিক্ষা দিবস’ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে মিছিল-মিটিংও রয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সময় সংবাদকে বলেন, জামায়াত-শিবির ’৭১ এর ঘাতক ছিল। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল তারা। এদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণই পদক্ষেপ নেবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে, ওরা সেই ঘাতকদেরই অংশ। ওরা জাতীয় শোক দিবসে অন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারে না। এটা এক ধরনের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের কর্মসূচি পালন করে। শিবির তো তাদেরই সৃষ্ট। সুতরাং তাদের এ কর্মকাণ্ড জাতীয় শোক দিবসকে কলঙ্কিত করেছে। জাতি ওদের এ কর্মসূচিকে জাতীয় শোক দিবসকে অশ্রদ্ধার কার্যক্রম হিসেবে দেখবে। এ স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ পিরিত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। যে কারণে বিএনপি-জামায়াত তাদের নেত্রীকে নিয়ে কেক কাটে এবং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির এ কর্মসূচি পালন করে। তথাকথিত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা, জাতির পিতার হত্যাকারীদের পক্ষাবলম্বন করার মতো ধৃষ্টতা এখনও পোষণ করে। এদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে আমরা ধিক্কার জানাই।’

এ বিষয়ে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদের বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণেই ফয়সালা করবে। আমরা জনগণের কাছে এদের চরিত্র উন্মোচন করে দিয়েছি। এ বিষয়গুলো আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরব, জনগণই এদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। যারা জাতির পিতার হত্যাকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাই।

এ বিষয়ে ছাত্র শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করেও কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সে সময়ে নোবেলজয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।’

দ্য টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *