জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে দেশজুড়ে উদ্বেগ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। কেবল নিম্নবিত্তরাই নয়; কুলিয়ে উঠতে পারছে না মধ্যবিত্তরাও।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে দেশজুড়ে উদ্বেগ

তার ওপর এবার পেট্রোল-অকটেনসহ বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে আরও চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে তেলের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতেই ডিজেল, কেরোসিন পেট্রোল এবং অকটেনের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের লিটার ৮০ থেকে ১১৪ টাকা, অকটেনের লিটার ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা, পেট্রোলের লিটার ৮৬ থেকে করা হয়েছে ১৩০ টাকা। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম কার্যকর হয়।

রংপুর: পেট্রোল-অকটেনসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের বেশিরভাগ ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে সটকে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। আগের দামে তেল সংগ্রহ করার আশায় পেট্রোল পাম্পগুলোর সামনে শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে ভিড় করছেন ক্রেতারা। এ সময় ফিলিং স্টেশনে ক্রেতাদের হট্টগোল দেখা যায়।

এ দিকে কুড়িগ্রামের ফিলিং স্টেশনে প্রতি লিটার পেট্রোল ১৩০ টাকা করে নেয়া হয় রাত ১২টার আগেই। এমন অভিযোগ করছেন সেখানকার বেশিরভাগ ক্রেতা। রংপুরে শাপলাচত্ত্বর এলাকার তিনটি পাম্প বন্ধ করে দেয়া হয় দাম বাড়ার খবর গণমাধ্যমে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে। মডার্নমোড় এলাকা, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা, সিওবাজার এলাকার ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। বুড়িরহাট এলাকার একটি ফিলিং স্টেশনে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় ও হট্টগোল ঠেকাতে পুলিশি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন পড়ে।

চট্টগ্রাম: নগরীর হালিশহর ঈদগাঁ এলাকায় পাম্পে ভিড় করছেন বাইকাররা। অনেক পাম্পের মালিক তেল বিক্রি না করে পাম্প বন্ধ করে দিয়েছেন। জ্বালানি তেলের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন গাড়ি চালকরা। না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাইকারারা। এ ছাড়া জ্বালানি নিতে আসা যানবাহনের কারণে আশপাশের সড়কগুলোতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ ছিলো।

কোতোয়ালি থেকে ঘুরে শাহ আমিনুল্লাহ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে নিতে এসে বলেন, রাত সাড়ে ১০টায় সরকারি প্রজ্ঞাপন থেকে রাত ১২টা থেকে তেল নতুন দামে কিনতে হবে। আমি সিএমপি পেট্রোল পাম্পে গেলে তারা বিদ্যুৎ নেই বলে জানান। কিন্তু পাম্পের আশপাশে গিয়ে দেখি বিদ্যুৎ আছে। পরে ৯৯৯ এ কল দিয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ জানালে তারা কোনো রেসপন্স করেনি।

খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তেল নিতে আসা মানুষের ভিড়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়াও তেল কিনতে এসে সাধারণ মানুষের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পঞ্চগড়: হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সংবাদে জেলায় পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে রাত থেকে শহরের প্রতিটি তেলের পাম্পে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল থাকলেও মালিকরা বাড়তি মুনাফার আশায় তেল বিক্রি বন্ধ রাখেন।

এ দিকে একই কারণে পাম্পগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন বাইক, বাস, ট্রাক চালকরা। দীর্ঘ সময় এ পাম্প ও পাম্প ঘুরেও মেলেনি জ্বালানি তেল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। ভুক্তভোগী মো. শাহ আলম ও আতাউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পাম্পে এসে দেখি তারা তেল সরবরাহ করছে না। বাড়তি দামে বিক্রির জন্য পাম্প মালিকরা তেল মজুত রেখেছেন।

ঠাকুরগাঁও: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবরে গভীর রাতে জেলার ফিলিং স্টেশনগুলোতে। ফিলিং স্টেশন মালিকরা মোটরসাইকেল চালকদের এক লিটার ও বড় যানবাহন চালকদের দশ লিটারের বেশি তেল দিচ্ছেন। তবে তেলের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তেল নিতে আসা যানবাহক চালকরা। জেলা ঠাকুরগাঁও জেলার পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক জানান, সবাইকে সন্তুষ্ট রাখতেই অল্প করে তেল দেয়া হচ্ছে।

গাইবান্ধা: তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে উপচে পড়া ভিড় গাইবান্ধা পেট্রল পাম্পগুলোতে। শহরের প্রতিটি তেলের পাম্পে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল থাকলেও বাড়তি দামের আশায় তারা তেল বিক্রি বন্ধ রাখে। এ দিকে রাত থেকেই পাম্পগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন বাস ও মোটরসাইকেল চালকরা।

ভোলা: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো খবরে জেলায় সব পাম্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন গাড়ি চালকরা। এ দিকে পুলিশ পাহারায় যুগিরঘোলের পদ্মা ওয়েল কোম্পানির পাম্প থেকে স্বল্প সংখ্যক গ্রাহককে অকটেন সরবরাহ করা হয়। ডিপোতে মজুদের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি মোটরসাইকেলে এক লিটার ও বড় গাড়িতে ৫ লিটার করে তেল সরবরাহ করা হয় আগের দামেই। জেলা শহরে মাত্র একটি পাম্প খোলা থাকায় হিমসিম খেতে হচ্ছে পাম্প কর্তৃপক্ষকে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। পাম্পের ম্যানেজার জানান, তেলে দাম বৃদ্ধির খবরে শত শত গাড়ি আসতে শুরু করেছে। রাতে ২ ঘণ্টায় যে গাড়ি এসেছে ২ মাসেও এতো গাড়ি আসে নাই। অকটেনের চাহিদা বেশি। ডিজেলে গাড়ি তেমন একটা আসছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *