চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ১১ জনেরই পরিচয় মিলেছে। তারা সবাই হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকার ‘আর অ্যান্ড জে’ নামক একটি কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষক।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীদুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহতরা হলেন: উপজেলার আজিম সাবরেজিস্ট্রার বাড়ির হাজি মো. ইউসুফের ছেলে মাইক্রোচালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইলিয়াছ ভুট্টোর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৭), একই ইউনিয়নের খোন্দকার পাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে জিয়াউল হক সজীব (২২), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজ মেম্বার বাড়ির জানে আলমের ছেলে ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), মজিদ আব্বাস চৌধুরী বাড়ির বাদশা চৌধুরীর ছেলে শিক্ষক রিদুয়ান চৌধুরী (২২), পারভেজের ছেলে সাগর (১৭) ও একই এলাকার আবদুল ওয়াদুদ মাস্টার বাড়ির আবদুল মাবুদের ছেলে ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোজাফফর আহমেদের ছেলে মোসহাব আহমেদ হিসাম (১৬), আব্দুল আজিজ বাড়ির মৃত পারভেজের ছেলে তাসমির হাসান (১৭), মনসুর আলমের ছেলে মো. মাহিম (১৭), ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবু মুসা খানের বাড়ির মোতাহের হোসেনের ছেলে মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯)।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল আলম সংবাদমাধ্যমকে জানান, আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও ছাত্ররা সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলেন। গাড়িতে কোচিং সেন্টারের চারজন শিক্ষক ছিলেন। বাকিরা শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, নিহত ও আহত সবার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার খন্দকিয়ায়। শুক্রবার (২৯ জুলাই) এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া পানির ঝরনা দেখতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে দুপুরে খৈয়াছড়া রেল স্টেশনের কাছে লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় মাইক্রোবাসটির সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেন মহানগর প্রভাতীর ধাক্কা লাগে।
ট্রেনটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় মাইক্রোবাসটিকে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় যানটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছয়জনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠান।
দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ। পরে রিলিফ ট্রেন এসে দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটিকে সরিয়ে ফেলার পর স্বাভাবিক হয় রেল চলাচল।
এদিকে এ দুর্ঘটনার পরপরই বিভাগীয় পার্সোনেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আনছার আলীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে।
এ ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে আটক করে পুলিশ। দুর্ঘটনার ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন।
এ দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালকের ওপর দায় চাপান বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি বলেন, গেটম্যান বারণ করলেও ট্রেনের লাইনে উঠে পড়ে মাইক্রোবাস। মাইক্রোচালকের অবহেলার কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।