নূপুর শর্মাকে ‘আপাতত’ গ্রেফতার না করার নির্দেশ

Slider সারাবিশ্ব


মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেত্রী নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় তাকে আপাতত গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

নূপুর শর্মার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, নূপুর শর্মাকে এখনই গ্রেফতার করা যাবে না। এখন ‘তার জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষা করা প্রয়োজন’।

মহানবী (স.)-কে নিয়ে এক আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে ভারতের একাধিক রাজ্যে অন্তত এফআইআর দায়ের হয়েছে। কোথাও কোথাও গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে সোমবার (১৮ জুলাই) সর্বোচ্চ আদালতের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো আর্জি জানান এ বিজেপি নেত্রী। প্রাণ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন বলে আদালতে দাবি করেন তিনি।

পরদিন (মঙ্গলবার) সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১০ অগস্ট পর্যন্ত তাকে (নূপুর শর্মা) কোনো মামলায় গ্রেফতার করা যাবে না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নতুন করে কোনো এফআইআর দায়ের হলেও সে ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কার্যকর থাকবে বলে জানান বিচারকরা।

এর আগে গত ১ জুলাই মামলা থেকে সুরক্ষার দাবিতে নূপুর শর্মা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ওই সময় বিজেপির বরখাস্ত এ নেত্রীর আর্জি খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। শুধু তাই নয়, মহানবী (স.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় নূপুর শর্মাকে ভর্ৎসনার পাশাপাশি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান বিচারকরা।

এক নির্দেশনায় দেশটির শীর্ষ আদালত বলেন, মহানবী (স.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ভারতজুড়ে উত্তেজনা উসকে দিয়েছেন নূপুর শর্মা। আদালত আরও বলেন, এজন্য পুরো দেশের কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।

আদালতের ওই ভর্ৎসনার কথা উল্লেখ করেই এদিন নিরাপত্তার আবেদন করেন নূপুরের আইনজীবী। আইনজীবীর অভিযোগ, যেভাবে তাকে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল তাতে তার প্রাণ সংশয় আরও বেড়ে গেছে। নূপুরের দাবি মেনে নিয়েই এদিন আদালতের পক্ষ থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলোকে নূপুর শর্মাকে নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

গত মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল টাইমস নাউ ওয়ান-এ মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) ও তার স্ত্রী হযরত আয়শা (রা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা।

এরপর তার ওই মন্তব্য সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি পোস্ট দেন দলটির দিল্লি শাখার মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নভিন জিন্দাল। ওই মন্তব্যের জেরে ভারতজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। রাজ্যে রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। শুধু তাই নয়, এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোসহ পুরো মুসলিম বিশ্ব।

কূটনীতিক তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানায় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত প্রভৃতি আরব দেশ। সেই সঙ্গে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। অবশেষে চাপের মুখে বাধ্য হয়ে নূপুর শর্মা ও নভিন জিন্দালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিজেপি।

ওই মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে যে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। সবশেষ নূপুর শর্মার অবস্থান সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেয়ায় রাজস্থানের উদয়পুরে কানাইয়া লাল নামের এক দর্জি হত্যার শিকার হন। হত্যার সময় দুই ঘাতক দাবি করে, ইসলাম ধর্মকে অবমাননার প্রতিশোধ নিচ্ছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *