নূপুর শর্মার মাথার দাম ঘোষণা, আজমির শরিফের খাদেম গ্রেফতার

Slider সারাবিশ্ব


মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে ভারতে বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার মাথার দাম ঘোষণা করায় রাজস্থানের আজমির দরগাহ শরিফের খাদেম সালমান চিশতিকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ।
সালমান চিশতির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, তিনি এক ভিডিওতে বলেন, যে ব্যক্তি নূপুর শর্মার শিরশ্ছেদ করতে পারবেন, তাকে নিজের বাড়ি উপহার দেবেন তিনি। নূপুর শর্মাকে পেলে গুলি করে হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন সালমান।

গত সোমবার রাতেই সালমান চিশতির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। তখন থেকেই পুলিশ তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি উল্লেখ করে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, তবে ভিডিওতে নূপুর শর্মার উদ্দেশে দরগাহর ওই খাদেমকে বলতে শোনা যায়, ‘সব মুসলিম দেশের কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমি রাজস্থানের আজমির শরিফ থেকে বলছি। হুজুর খাজা বাবার দরবার থেকে এ বার্তা দেয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে দেওয়ান জয়নুল আবেদিন আলী খানের কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে ওই ভিডিওটির নিন্দা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, মাজার হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জায়গা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভিডিওটিতে খাদেম যে মত দিয়েছেন, তাকে দরগাহর বার্তা বলে বিবেচনা করা যাবে না। এটি ব্যক্তিগত মতামত, যা প্রচণ্ড রকমে নিন্দনীয়।

এদিকে গত ১ জুলাই এক নির্দেশনায় দেশটির শীর্ষ আদালত বলেছেন, মহানবী (স.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ভারতজুড়ে উত্তেজনা উসকে দিয়েছেন নূপুর শর্মা। আদালত আরও বলেছেন, এ জন্য পুরো দেশের কাছে তার ক্ষমতা চাওয়া উচিত।

বিতর্কিত ওই মন্তব্যের কারণে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে ভারতের একাধিক রাজ্যে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দায়ের হওয়া সেসব এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তর করার আর্জি নিয়ে ১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে হাজির হন নূপুর। এ সময় তার আইনজীবী বলেন, নূপুরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, ‘তিনি হুমকির মুখে পড়ছেন, নাকি তিনিই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন। তিনি সারা দেশে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেছেন। আজ পুরো দেশে যা ঘটছে, তার জন্য দায়ী একা এই নারী।’

এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তর করার ব্যাপারে নূপুরের আর্জি খারিজ করে দেন শীর্ষ আদালত। আদালত বলেন, ‘এই পিটিশনে তার ঔদ্ধত্য ঠিকরে বেরোচ্ছে, যেন দেশের ম্যাজিস্ট্রেটরা তার কাছে খুবই ছোট।’

গত মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল টাইমস নাউ ওয়ান-এ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) ও তার স্ত্রী হজরত আয়শা (রা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা।

এরপর তার ওই মন্তব্য সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি পোস্ট দেন দলটির দিল্লি শাখার মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নভিন জিন্দাল।

বিতর্কিত ওই মন্তব্যের জেরে ভারতজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। রাজ্যে রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। শুধু তাই নয়, এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোসহ পুরো মুসলিম বিশ্ব।

কূটনীতিক তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানায় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত প্রভৃতি আরব দেশ। সেই সঙ্গে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। অবশেষে চাপের মুখে বাধ্য হয়ে নূপুর শর্মা ও নভিন জিন্দালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিজেপি।

ওই মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে যে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। সবশেষ নূপুর শর্মার অবস্থান সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেয়ায় রাজস্থানের উদয়পুরে কানাইয়া লাল নামের এক দর্জি হত্যার শিকার হন। হত্যার সময় দুই ঘাতক দাবি করে, ইসলাম ধর্মকে অবমাননার প্রতিশোধ নিচ্ছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *