সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


সুনামগঞ্জ: কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও অব্যহত পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে আবারো বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই দ্রুত বাড়ছে পানি, বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে বহু জায়গা ডুবে গেছে, উপচে পড়ছে পানি। যাবাহন চলছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, শান্তিগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ছাতকসহ সবক’টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি ঘাট, জগন্নাথবাড়ি এলাকা, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, নবীনগরসহ কয়েকটি স্থানের নিচু এলাকা ও সড়ক প্লাবিত হয়ে ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর-নাগরিকরা।

বুধবার সকাল থেকে আবারো বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর উপজেলার সড়ক প্লাবিত হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে হাওরে ঢেউয়ের তাণ্ডবে কিছু ঘরবাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে জামালগঞ্জ-কাঠইর সড়কের উজ্জ্বলপুর অংশ।

বুধবার বিকেল থেকে সিলেটসহ সারা দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও হাট-বাজারে পানি প্রবেশ করছে। সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলা শহরের প্রধান সড়কে পানি ঢুকে পড়েছে। এমনকি সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের কোনো কোনো স্থানে পানি ওঠায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাবাহন।

বন্যার জন্য জেলার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাই বেশি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কিছুটা কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্ধ আছে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস।

যেসব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে, সেসব বিদ্যালয় বন্ধ আছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও ফাইল নিরাপদ উচ্চতায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।

জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষ বুধবার সকাল থেকে পানিবন্দি হয়ে আছেন। ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ওঠায় বাধ্য হয়েই পাঠদান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় অভিভাবকরাও ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ ডুবে যাওয়ায় খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ-সাচনাবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকায় অনেক এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষজনের ভোগান্তি বেড়েছে।

গত বন্যায় হাওরে পানিতে ভরপুর থাকায় সম্প্রতি ঢলের পানি এসেই মানুষের ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও জেলার জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লার নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়েই চলেছে। জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের প্রধান নতুন পাড়া রাস্তায় পানি উপচে পড়ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জহুরুল ইসলাম জানান, কয়েক দিন যাবত সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয়ে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির পানি উজান থেকে নেমে আসায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি জানান, বুধবার সুনামগঞ্জে ৫১ মিলিমিটার এবং তাহিরপুরের লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, চলমান বৃষ্টিপাত আরো কয়েক দিন থাকবে। এই মাসে ৮১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মধ্যে ৬৮৭ মিলিমিটার হয়েছে। এই কয়েক দিনে যে পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা ১৯ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দ্রুত বাড়ছে পানি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি আমাদের আছে। প্রতিটি উপজেলায় জিআরের ২০ টন করে চাল পাঠানো হয়েছে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুরই মজুদ রয়েছে। দুর্যোগ হলে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *