গাজীপুর মহানগরে আঃলীগ বনাম জাহাঙ্গীরলীগ, কোন্দল বিএনপিতেও!

Slider টপ নিউজ


গাজীপুর: বাংলাদেশের শিল্প রাজধানীখ্যাত গাজীপুর জেলা। আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় গাজীপুর মহানগর। ২৫ লাখ ভোটার হলেও ভাসমান লোকের সংখ্যা বেশী হওয়া এই মহানগরে অধিবাসীর সংখ্যা অনেক বেশী। কেউ কেউ বলেন, প্রায় এক কোটি লোকের বসবাস হতে পারে গাজীপুর মহানগরে। গাজীপুর মহানগরে বাস করেন এমন লোকের সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশী। এই বিশাল আয়তন ও লোকের বাসস্থল গাজীপুর মহানগরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল অনেকটা প্রকাশ্যেই। ক্ষমতাসীন সরকারী দলের মধ্যে যেমন বিরোধ তেমনি বিরোধী দলেও। সব মিলিয়ে গাজীপুর মহানগরে প্রধান দুই দল ঐক্যবদ্ধ না থাকায় আগামী সিটি ও জাতীয় নির্বাচনে কোন দল কেমন করবে তা বলা মুশকিল।

অনুসন্ধান বলছে, গাজীপুর মহানগরে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের আভ্যন্দরীন কোন্দল এখন প্রকাশ্যেই। গাজীপুর সিটির মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধরণ সম্পাদক পদ থেকে বহিঃস্কারের পর কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরপন্থী হওয়ার অভিযোগে দুই শতাধিক নেতাকে শো’কজ করা হয়েছে। এই শো’কজকে কেন্দ্র করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগে বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। ত্যাগী কর্মীরা মনে করছেন, জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যদি দুই শতাধিক আওয়ামীলীগের নেতা থাকেন, তবে জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামীলীগ থেকে কম শক্তিশালী নয়। এই শো’কজ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আগামী দিনে আওয়ামীলীগ বনাম জাহাঙ্গীর লীগ হয়ে যেতে পারে বলে বলাবলি হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যে সকল নেতা বিভিন্ন সময় মঞ্চে ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই শো’কজের আওতায় এখনো আসেননি। কিছু কিছু নেতার কাছে শো’কজ নোটিশ যাওয়ার পর গ্রহনও করেননি। গণমাধ্যমে আলোচিত শো’কজ নোটিশ যে সব নেতা গ্রহন করেননি তাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে শো’কজ করা হয়নি বলে অস্বীকারও করা হচ্ছে। শো’কজ করার পর গ্রহন করা না করা ও শো’কজ অস্বীকার করা নিয়ে ধুম্রজালও তৈরী হয়েছে। শো’কজ প্রাপ্তরা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে দেখা করে সাংবাদিক সম্মেলন করার মাধ্যমে সকলকে বিচলিত না হওয়ারও আহবান জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে এটা অনেকটাই পরিস্কার। তবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগ বলছে, তাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। তারা ঐক্যবদ্ধ।

আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে যারা নৌকা প্রতীক চাইতে পারেন বলে মাঠে কথা চলছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মোঃ কামরুল আহসান সরকার রাসেল, যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম ও কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল। তবে জাহাঙ্গীর আলম পন্থীরা বলছেন, তাদের নেতার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। তারা আশা করছেন, আওয়ামীলীগ তদন্ত প্রতিবেদন বিচার বিশ্লেষন করে জাহাঙ্গীর আলমকে সকল পদে ফিরিয়ে আনলে জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক চাইবেন। আর যদি তা না হয়, তবে জাহাঙ্গীর আলম স্বাতন্ত্রভাবে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন।

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি গাজীপুর মহানগরে একাধিক ভাগে বিভক্ত। দলীয় কোন্দল থাকায় গাজীপুর মহানগর বিএনপি চলছে আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা-কর্মীরা বলছেন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিব দুই গ্রপে বিভক্ত হয়ে আছেন। গাজীপুর মহানগর বিএনপির থানাগুলোর কমিটি গঠন নিয়েও বিভ্রান্তি চলছে। এক ইউনিটে একাধিক কমিটি থাকার খবর বাজারে আছে। ইতিহাস বলছে, গাজীপুর সিটিকর্পোরেশনের প্রথম মেয়র ছিলেন বিএনপির নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নান। সম্প্রতি তার মৃত্যুর পর অধ্যাপক এম এ মান্নানের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, তা নিয়েও প্রতিযোগিতা আছে।

গাজীপুর সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার। বয়সজনিত কারণে তিনি আর আগেরমত দলে সময় দিতে পারেন না। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে গাজীপুর সিটিতে কে দলীয় মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা রয়েছে। আপাতত বিএনপি থেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শুনা যায়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব সালাউদ্দিন সরকার, যুগ্ম আহবায়ক শওকত হোসেন সরকার, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা বিএনপির আহবায়ক কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু, অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে মঞ্জুরুল করিম রনি সহ প্রায় ডজন খানেক নেতা।

গাজীপুর মহানগরবাসীর অভিমত, দলীয় কোন্দল থাকায় গাজীপুর সিটিতে কোন মেয়র মেয়াদপূর্ণ করতে পারছেন না। মেয়র সরকারী দলের হউক বা বিরোধী দলের হউক মেয়াদের আগেই উঠতে হচ্ছে। আর ভাগ্যসুপ্রসন্ন হওয়ায় দুই মেয়াদেই শেষ সময়গুলোতের মেয়রের চেয়ারে বসছেন কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। ফলে দুই বারই মেয়র হয়েও গাজীপুর সদরের কেউ মেয়রের চেয়ারে পুরো মেয়াদ পূর্ণ করতে পারছেন না। এই অবস্থায় প্রধান দুই দলের কোন্দল নিরসন করে ভোট যুদ্ধ হলে সঠিক নেতা ও সেবক পাবে জনগন। আর তা না হলে উঠ-বস নীতি আবার চালু হওয়ার আশংকা করছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *