কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বয়স পেরিয়ে যাওয়া শতাধিক চাকরিপ্রার্থী বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৫তম বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান। তারা শেষবারের মতো বিজেএস পরীক্ষা দিয়ে সহকারী জজ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ চান। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মেধাবী এসব তরুণ-তরুণী। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এখনো তাদের আবেদনে সাড়া দিচ্ছেন না। অথচ আজ রবিবারই ১৫তম বিজেএসে আবেদনের শেষ দিন।
গত ১২ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ বিজ্ঞপ্তিতে সুযোগ চেয়ে আবেদনের সময়সীমা বাড়ানোর আকুল আবেদন জানিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের দৌড়ঝাঁপ দৈনিক আমাদের সময়ের নজরে এসেছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর করা চাকরিপ্রত্যাশীরা আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদনপত্র দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেলা ও দায়রা জজ) শরীফ এএম রেজা জাকের আমাদের সময়কে বলেন, ‘কমিশনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের কাছে আমি বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। কিন্তু বয়স পেরিয়ে যাওয়া প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের বক্তব্যের জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব (সিনিয়র জেলা জজ) সৈয়দ জাহেদ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি একটি আবেদন পেয়েছি। আবেদনটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিনা, তা আমি বলতে পারব না। এটা কমিশনের চেয়ারম্যান স্যারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু জুডিসিয়ারিতে সে রকম নিয়োগের কোনো সুযোগ সৃষ্টি করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘না; এটা আমাদের নিয়োগবিধিতে নেই। এ ছাড়া নন-ক্যাডারের মতো পদও নেই। কোর্টের স্টাফ নিয়োগ পৃথক নীতিমালা অনুযায়ী হয়।’
চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদনে বলা হয়, গত ১২ মে পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (১৫তম বিজেএস) পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ সালে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। ফলে মহামারীর করাল গ্রাসে পরীক্ষার্থীরা বহুল কাক্সিক্ষত বিজ্ঞপ্তি না পেয়ে একটি মহামূল্যবান বছর জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছে। ফলে ২০২১ সালে হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর বয়সসীমা জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নির্ধারিত বয়সসীমা (৩২ বছর) ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ১৩তম বিজেএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি ১৪তম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের বয়সসীমা দেওয়া হয় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ।
এতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ ও ২০২১ এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে ২০২০ সালে নিয়মানুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিধান থাকলেও কোভিডের কারণে সে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি। অর্থাৎ ২০২২ সালের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ মাস পরীক্ষার্থীরা কোনো বিজ্ঞপ্তি পাননি। এ কারণে ১৫তম বিজেএসে বয়স পেরোনো প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আবেদনকারীরা।
নাম প্রকাশে একাধিক প্রার্থী আমাদের সময়কে বলেন, করোনার মধ্যেই তাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। করোনা না থাকলে নিয়মানুযায়ী ২০২০ সালেই একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতো। সেখানে তারা আবেদন করে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারত। কিন্তু করোনা তাদের সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।
তারা বলছেন, গত বছর সরকারি অন্যান্য চাকরিতে প্রার্থীদের ২১ মাসের বয়স ছাড় দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জুডিসিয়ারিতে জনপ্রশাসনের মতো বয়স ছাড় দিয়ে ১৫তম বিজেএসে আবেদনের সুযোগ দিলে তারা যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারত। সংশ্লিষ্টরা যেন মানবিক দিক বিবেচনা করে সে সুযোগ দেয়, সে জন্য তারা লিখিত আবেদন করেছে।