ভবিষ্যতে আরও দাম বাড়ানোর চিন্তা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের জন্য ২৬ হাজার ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার এ খাতে বরাদ্দ এক হাজার ৪১৯ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। গতকাল জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেন। এর মধ্যে বিদ্যুতে ২৪ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা এবং জ্বালানিতে ১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বছর বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে উন্নয়ন বরাদ্দ মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগামী অর্থবছরে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা শতভাগ

ভোক্তাপর্যায়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। তবে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের বিক্রয়মূল্য পর্যায়ক্রমে ও স্বল্পআকারে সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে জ্বালানি তেল এবং এলএনজির মূল্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ কারণে দেশেও জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করা হবে। সরকারের ভাষায় সমন্বয় বলা হলেও কার্যত আন্তর্জাতিক বাজারের জ্বালানিপণ্যের ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে আগামী অর্থবছরেও জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম বাড়াতে থাকবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৩ বছর ধরে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে দেশে সম্প্রতি মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৩ বছরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট-আওয়ার থেকে ৫৬০ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করতে পেরেছি। এ সময়ে ৫ হাজার ২১৩ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন এবং ৩ লাখ ৩৬ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেস লস ১৪ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। জমির প্রাপ্যতা, জ্বালানি পরিবহন সুবিধা ও লোড সেন্টার বিবেচনায় পায়রা, মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকাকে পাওয়ার হাব চিহ্নিত করে বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। এ ছাড়া কয়লাভিত্তিক রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পুরোদমে চলছে। রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে প্রায় ৭৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং গোপালগঞ্জ-রামপাল ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন দুটির নির্মাণকাজ শেষ করে ইতোমধ্যে কমিশনিং করা হচ্ছে। মোংলা-খুলনা (দক্ষিণ) ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার পদ্মা রিভার ক্রসিং অংশের পদ্মা রিভার বেডের সাতটি টাওয়ারের ফাউন্ডেশনের নির্মাণকাজ চলছে।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে সৌরপ্যানেল আমদানিতে ১ শতাংশ কর বসনো হয়েছে। দেশে সৌরপ্যানেল উৎপাদনকারীদের সহায়তা দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, সারাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব সৌরপ্যানেল এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা হয়। সোলার প্যানেল আমদানিতে এর আগে কোনো কর দিতে হতো না। এখন থেকে কর দিতে হবে। সরকার মনে করছে, এর ফলে দেশেই সৌরপ্যানেল উৎপাদনের কারখানা নির্মাণ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *