আগামী নির্বাচন ও সম্ভাব্য সমীকরণ

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

বীজগণিতে ‘সমীকরণ’ শব্দটি আছে। সমীকরণের অর্থ হচ্ছে, ‘সংখ্যা ও প্রতীক ব্যবহার করে লেখা এক ধরনের গাণিতিক বিবৃতি, যাতে দু’টি জিনিসকে গাণিতিকভাবে সমান বা সমতুল্য দেখানো হয়।’ বীজগণিত থেকে এখন এই সংজ্ঞা রাজনীতিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। সন্ধান করা হচ্ছে রাজনৈতিক মিল ও অমিলের। মিলের মধ্যে অমিল আছে, অমিলের মধ্যেও মিল আছে। মনে আছে, সমীকরণের সমাধান করতে গিয়ে আমরা কমন নেয়ার চেষ্টা করতাম। রাজনীতিতেও সেরকম। এই সময়ের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমীকরণের জোরদার প্রক্রিয়া চলছে। উপলক্ষ ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচন। উদ্দেশ্য ক্ষমতায় আরোহণ। এই নিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে যোগ-বিয়োগ পূরণ-ভাগ চলছে। বাংলাদেশের সমাজ শতধাবিভক্ত। এই বিভক্তির মাঝে ঐক্য সাধন বড়ই কঠিন কাজ। পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলে রাজনীতিতে আদর্শিক প্রবণতা প্রবল ছিল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর আদর্শের রাজনীতির স্থান দখল করে ক্ষমতার রাজনীতি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা ইচ্ছা বলা হয়। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা ইচ্ছা করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরও এই সমীকরণ বদলায়নি এতটুকু। ‘পাওয়ার বিকামস অ্যান্ড ইন ইটসেলফ’। ক্ষমতায় যাওয়াটাই উদ্দেশ্য ও বিধেয় হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালের বিজয়ের পর জাতীয় স্বার্থে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের আহ্বান জানানো হয়। পৃথিবীর অন্যত্র মুক্তিযুদ্ধের পর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হতে দেখা যায়। বাংলাদেশে তা হয়নি। ক্ষমতাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলটি এককভাবে সরকার গঠন করে। দুর্নীতি ও দুঃশাসনে শিগগিরই এ দলের জনপ্রিয়তা হিমাঙ্কে পৌঁছায়। প্রবল সরকারবিরোধী রাজনীতির প্লাবন বয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার সমীকরণকে আদর্শিক লেবাস দেয়ার চেষ্টা করে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, মস্কো ধারার আরেকটি তাঁবেদার দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ নিয়ে গঠিত হয় তথাকথিত গণঐক্যজোট-গজ। এই ‘গণঐক্যজোট’ আসলে গণবিরোধী কাজ করে। তারা বঙ্গবন্ধুকে কুবুদ্ধি দেয়। ‘ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা’ করার নীতি গৃহীত হয়। গণতন্ত্রের কবর দিয়ে গঠিত হয় বাকশাল। গায়ের জোরে মুলুক দখলের প্রক্রিয়া সাধিত হয় সংসদীয় অভ্যুত্থানে। স্লোগান উত্থিত হয়, ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনায় নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়ে যায় সব।

শুরু হয় সামরিক শাসন। নতুন রাজনীতি। নতুন সমীকরণ। জিয়াউর রহমান জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ বন্দুকের মুখে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটালেও ‘জিয়াউর রহমান অনুসৃত আদর্শ’ বহাল রাখেন ক্ষমতার স্বার্থে। ১৯৯১ সালে এ দেশের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের আদর্শ জয়লাভ করে। ১৯৯৬ সালে ওই আদর্শের বিপরীত শক্তি জয়লাভ করে। তারা এ সময় লেবাসে উচ্চারণে জিয়াউর রহমানের ভাবধারা ব্যবহার করে জনগণকে প্রতারিত করেছিল। ক্ষমতায় আসার পর তারা স্বরূপ ধারণ করে। ২০০১ সালে নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের আদর্শে পুষ্ট, ইসলামী মূল্যবোধসমৃদ্ধ চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ফিরে আসে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী মূল্যবোধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ ধারার বিভাজন তীব্রতর হয়ে উঠে। উভয় আদর্শের সপক্ষে এবং বিপক্ষে রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর স্পষ্ট সমীকরণ ঘটে। ২০০৮ সালের নির্বাচন- পরবর্তীকালে এক দিকে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মহাজোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। অপর দিকে ইসলামী ভাবধারার ২০টি দল একত্র হলো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর অর্থে ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে দু’টি জোটের বিপরীত অবস্থান বা সমীকরণ স্পষ্ট হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে আবারো রাজনৈতিক সমীকরণের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। ইসলামী ভাবধারাপুষ্ট ২০ দলীয় জোটকে বহাল রেখে যুক্তফ্রন্ট নামে মিশ্র জোটের আবির্ভাব ঘটে। এ সময়ে আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পরাজিত করার স্বার্থে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নমনীয় শক্তির সাথে ইসলামী মূল্যবোধের দুর্বল সমীকরণ লক্ষ করা যায়। নিশীথ রাতের নির্বাচনে জয়লাভের পর কার্যত যুক্তফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

এরূপ সমীকরণের পর আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। বিরোধী ডান ও বাম ধারা নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষ ক্ষমতাসীন শক্তিকে অপসারণের লক্ষ্যে নতুন অধ্যায় রচিত করতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন জোটের বিপরীতে আরেকটি বড় ধরনের জোট কৌশলগতভাবে আত্মপ্রকাশ করছে না। ১৯৯০ সালে এরশাদ পতন আন্দোলনে তিনটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। আদর্শিকভাবে চিহ্নিত করলে তিনটি ধারা দৃশ্যমান হয়। এগুলো ছিল ক্ষমতাশ্রয়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। দ্বিতীয়ত, জাতীয়তাবাদী জোট। তৃতীয়ত, বাম ধারার সাতদলীয় জোট। এরা আদর্শিকভাবে পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও বিপরীত ধারা অনুসরণ করলেও এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে একমত ছিল। যুগপৎ আন্দোলন ছিল তাদের রণকৌশল। এই মুহূর্তে জোটগত কৌশল সম্ভব হচ্ছে না, মূলত ক্ষমতাসীন সরকারের নিপীড়নের ভয়ে। দীর্ঘ আন্দোলন ও নির্বাচনী ব্যর্থতার পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নতুন করে নতুন কৌশলে রাজনৈতিক সমীকরণ ঘটাতে তৎপর হয়েছে।

সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বিএনপি সংলাপ শুরু করেছে। এই আন্দোলনে তারা ডান-বামসহ বিভিন্ন ও বিপরীত মতের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ এগিয়ে নিচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্য দিয়ে নতুন কোনো রাজনৈতিক জোট আত্মপ্রকাশ করছে না। বরং প্রতিটি রাজনৈতিক দল অভিন্ন লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন করতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। বিএনপির রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চলমান সংলাপ শেষ হলে দাবিগুলো আরো সুনির্দিষ্ট করে একটি রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। এর ভিত্তিতে সরকার পতন আন্দোলন পরিচালিত হবে। বিগত সময়ে নানা কারণে ২০ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এর কারণের মধ্যে রয়েছে- ১. সরকারের ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি; ২. নিপীড়ন কৌশল; ৩. নেতৃত্বের কোন্দল ও ৪. বিএনপির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। বিএনপি নেতৃত্ব এখন এসব ‘ভুল বোঝাবুঝি’ অবসানে তৎপর রয়েছে। বিএনপি জোটের বাইরে বিশেষত বাম-ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ভূমিকা না থাকলেও বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণমাধ্যমভিত্তিক ভূমিকা রয়েছে। অপর দিকে, ইসলামী শক্তির সাথেও বিএনপির সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। কৌশলগত কারণে বিএনপি ইসলামিক দলগুলোর সাথে যোগাযোগে সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশেষত প্রধান ইসলামিক দলটি নিয়ে বাম-ধারার বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বিএনপি। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, ব্যক্তি নয় জনগণের সমর্থন যদি সম্পর্কের ভিত হয় তাহলে নির্বাচনী বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলও তাদের সমীকরণ শুরু করেছে। এক দিকে তারা মহাজোটের মাধ্যমেই নির্বাচনী জোট করার ঘোষণা দিচ্ছে। অপর দিকে, নিপীড়ন কৌশল হিসেবে ইসলামী শক্তি, গোষ্ঠী, দল ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছে।

অতিসম্প্রতি তথাকথিত গণকমিশন বা ঘাদানিক ১১৬ জন আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে শ্বেতসন্ত্রাস শুরু করেছে। এতে পরস্পরবিরোধী আলেম-ওলামারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। বিশেষ করে অগ্রসরমান দল চরমোনাই পীর সাহেবের ইসলামী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আশা করা যায়, সব ইসলামী দলের সমন্বয়ে একটি জোট বা প্লাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করবে। আল্টিমেটলি এটি বৃহত্তর ও জাতীয়তাবাদী শক্তির জন্য সহায়ক হবে। ওই দ্বিবিধ রাজনৈতিক সমীকরণের বাইরে রয়েছে একটি তৃতীয় শক্তি। এই তৃতীয় শক্তি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। বর্তমান জাতীয় সংসদে তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। সংসদীয় বিতর্ক লক্ষ করলে বোঝা যায়, তারা অতীতের ‘রাজকীয় বিরোধী দল’ ভূমিকা নাকচ করে ‘প্রকৃত’ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চাচ্ছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের সমালোচনা করছেন। জাতীয় পার্টির অঞ্চলভিত্তিক প্রাধান্য রয়েছে। জিএম কাদেরের মতো প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব রয়েছে। কিন্তু এর নেতৃত্বের সঙ্কটও রয়েছে। রওশন এরশাদ ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির ভক্ত। এরশাদের এককালের পরিত্যক্তা স্ত্রী বিদিশা এরশাদ আরেকটি জাতীয় পার্টি খুলে বসেছেন। জিএম কাদেরের জন্য এগুলো বিব্রতকর। আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক সমীকরণ যদি গণআন্দোলনের দিকে ধাবমান হয় তাহলে আশা করা যায়, জিএম কাদের জনগণের সাথেই থাকবেন। সে ক্ষেত্রে সরকারি সমীকরণ অগ্রাহ্য করে তিনি বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এর বিপরীতে রওশন এরশাদ স্বাভাবিকভাবেই তাদের পুরনো মিত্র আওয়ামী লীগের দিকেই যাবেন। আর বিদিশা এরশাদ সরকারের ইঙ্গিতেই কলকাঠি নাড়ছেন বলে গুজব ছড়িয়েছে।

আগামী নির্বাচন কেমন হবে, কিভাবে হবে এবং আদৌ হবে কি না! এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সরকার নির্বাচন করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে যদি তাদের ভরাডুবির আশঙ্কা তীব্রতর হয়ে উঠে তাহলে নির্বাচন হয়তো আদৌ হবে না। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে নির্বাচনকালীন সরকার চাইছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নামেই ডাকা হোক নির্বাচনের নিয়ামকে পরিণত হয়েছে এটা। আরেকটি প্রস্তাব এসেছে ডাক্তার জাফরুল্লাহর তরফ থেকে। জাতীয় সরকার নামে তিনি একটি বিশেষ সরকারের প্রস্তাব পেশ করেছেন। এই সরকার একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, সংস্কার ও কর্মসূচি নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময় দেশ শাসন করবে। তিনি বেশ কিছু নামও প্রকাশ করেছেন। ডাক্তার জাফরুল্লাহর এই প্রস্তাব মহৎ কিন্তু অবাস্তব। যাই হোক, যেকোনো ব্যবস্থায় হোক রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া তা সম্ভব নয়। অপর দিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনের আগেই নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন পরবর্তীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবটি বাস্তব পরিকল্পনাসম্মত এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মনে হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং সরকারের পতন নিশ্চিত করে তুলতে পারে তাহলেই জাতীয় লক্ষ্য অর্জিত হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৩ গোটা জাতির জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে গোটা জাতি গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করবে না বাকশাল স্বৈরতন্ত্রের দিকে ধাবিত হবে। সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর এর ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং ইসলামী শক্তির কমবেশি ঐক্য সংহতি সহজ ও সম্ভব। কিন্তু এ সবই অসম্পূর্ণ ও অসমাপ্ত থেকে যাবে এতে জাতীয় পার্টির মতো তৃতীয় শক্তির সংযোজনে। অতীতে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সংবেদনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার এবং তার পার্শ্বশক্তি সফলতা অর্জন করেছে। একই রণকৌশল অবলম্বন করে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের মানুষ জাতীয় পার্টিকে তাদের সাথী করে নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে জিএম কাদের বা জাতীয় পার্টির অপরাপর নেতৃত্বকে যথার্থ সম্মান দিতে হবে। জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে জাতীয় নেতৃত্ব যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। প্রয়োজনে বিএনপি জাতীয় সরকারের রূপরেখা আরো স্পষ্ট করে ঘোষণা করতে পারে। প্রয়োজনে সমঝোতা ও প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে। যারা এখনো সংশয় ও সন্দিহানে রয়েছেন তারা মন্ত্রিসভা গঠন দ্বারা যেন সাহসী ও বিশ্বস্ত হতে পারেন সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, গোটা জাতি একটি সঙ্কটকালীন সময় অতিক্রম করছে। প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতার জন্য এই লড়াই নয়। মানুষ চায় গুণগত পরিবর্তন। এক ধরনের সন্ত্রাসী, লুটপাটকারী ও দুর্নীতিবাজদের তাড়িয়ে অন্য ধরনের সন্ত্রাসী, লুটপাটকারী ও দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় বসাতে চায় না এ দেশের মানুষ। যদি সুশাসন নিশ্চিত হয়, যদি গণতন্ত্র গণতন্ত্রের অর্থেই কায়েম হয়, তাহলে মানুষ রক্তের বিনিময়ে হলেও তা অর্জন করবে। রাজনৈতিক শক্তির সমীকরণ যেন সেই অভীষ্ট লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়।

লেখক : ড. আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *