ভারতে কমছে চালের দাম, রপ্তানিমূল্য ৫ বছরে সর্বনিম্ন

Slider সারাবিশ্ব


ক্রেতাদের জন্য সুখবর- আপাতত চাল রপ্তানিতে কোনো বিধিনিষেধ দিচ্ছে না ভারত। দেশটিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ যেমন স্থিতিশীল রয়েছে, তেমনি মজুতও পর্যাপ্ত। এ অবস্থায় রপ্তানি নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই ভারত সরকারের। শুধু তা-ই নয়, দেশটিতে গত সপ্তাহে চালের রপ্তানিমূল্য কমে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে ক্রেতা দেশগুলোতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গম-চিনির পর ভারত চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়। তবে এ ধরনের খবরগুলোকে পরে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেন ভারতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও জানায়, পর্যাপ্ত মজুত ও অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কম থাকায় এই মুহূর্তে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করছে না ভারত।

খবরে বলা হয়, ভারতে গত সপ্তাহে চালের রপ্তানিমূল্য আরও কমে প্রতি টন ৩৫০ মার্কিন ডলার থেকে ৩৫৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ১৬২ টাকা থেকে ৩১ হাজার ৫১৮ টাকা প্রায়। দেশটিতে এটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে চালের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য।

ভারত সরকারে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্তর চেয়েও বেশি চাল মজুত রয়েছে। তাই রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার ক্ষেত্রে দাম বা প্রাপ্যতা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে ভারতের চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।

চাল উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় এবং রপ্তানিতে প্রথম। গত অর্থবছরে দেশটি অ-বাসমতি চাল রপ্তানি করেছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ টন। সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসের মধ্যেই এর পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড ২ কোটি ১২ লাখ টনে পৌঁছেছে।

তবে রপ্তানি বাড়লেও ভারতে চালের দাম কমছে। এর কারণ হিসেবে বিশাল মজুত ও সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বি ভি কৃষ্ণ রাও।

ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার (এফসিআই) কাছে বর্তমানে ধান ও চালের মজুত রয়েছে ৬ কোটি ৬২ লাখ টনেরও বেশি, যেখানে তাদের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ১ কোটি ৩৫ লাখ টন।

বি ভি কৃষ্ণ বলেন, চাল রপ্তানিতে কোনো বিধিনিষেধের প্রয়োজন নেই। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের উৎপাদন ও দাম প্রভাবিত হয়েছিল, কিন্তু চালের ক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলটি প্রধান উৎপাদক বা ভোক্তা কোনোটাই নয়।

গত কৃষিবর্ষে ভারতে চাল উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১২ কোটি ১১ লাখ টন। চলতি বছর এরই মধ্যে চালের উৎপাদন বেড়ে রেকর্ড ১২ কোটি ৯৬ লাখ টনে পৌঁছেছে।

বাড়তি উৎপাদনের কারণে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে চাল কিনতে বাধ্য হয়েছে এফসিআই। চলতি বছরে এ পর্যন্ত রেকর্ড ৮ কোটি ৪ লাখ টন ধান কিনেছে ভারতীয় সংস্থাটি, গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭০ কোটি ৭০ লাখ টনের মতো।

অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির মতে, এফসিআই’র সংগ্রহ বৃদ্ধিই ইঙ্গিত দিচ্ছে, দেশে চালের ঘাটতি নেই। তাই চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও কোনো যুক্তি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *