বাংলাদেশে তৃনমূলে হাহাকার, অর্থনীতির উন্নয়নে চেষ্টা করছে সরকার

Slider সম্পাদকীয়


ঢাকা: দুই বছর মহামারী করোনায় বিশ্ব যখন বিধ্বস্থ সেই কারণে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। করোনা এখনো বিনাশ না হলেও হয়ে যাওয়া ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশে চরম প্রভাব পড়েছে। করোনায় দিশেহারা মানুষ যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বেশী মাত্রায় হতাশায় পড়ে গেছে। এদিকে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষের বছরে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। করোনা ও যুদ্ধের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক দল গুলো নিজেদের মত করে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে বাংলাদেশ ক্ষুধার্থ মানুষের হাহাকার নিয়ে শুরু হয়েছে রজনীতি।

বাংলাদেশ উন্নয়ন সমীক্ষা খন্ড ৩৮ বার্ষিক সংখ্যা ১৪২৭ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব: একটি জেন্ডার দৃষ্টিকোণের ২নং প্যারায় বলা হয়েছে,

কাভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক জনবহুল দেশ। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশ এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের মার্চের ৮ তারিখে প্রথম কোভিড ১৯-এর রোগী শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মোট ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬২ জন এবং করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল মোট ৪ হাজার ৬৬৮ জন (প্রথম আলো ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০)। করোনার প্রকোপের ফলে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অর্থনীতি, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। বস্তুত কোভিড-১৯ দেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব তিনটি প্রাথমিক ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়: প্রথমত, ২৬ মার্চ ২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রথম লকডাউন ঘোষণা করে যা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হয়। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে দেশে দ্বিতীয় বারের মতো লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের কারণে দেশের স্থানীয় উৎপাদন ও বাণিজ ̈হ্রাস পেয়েছে; দ্বিতীয়ত, তৈরি পোশাক খাতে (আরএমজি) রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে এবং তৃতীয়ত, বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে (IMF 2020)।

মহামারী প্রাদুর্ভাবের আগে বাংলাদেশের মোটামুটি একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল, যা দারিদ্র ̈ ও সামাজিক বৈষম ̈ হ্রাস করতে সাহায্য করেছে। ২০১৯ সালে যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.২ শতাংশ, ২০২০ সালে এসে তা কমে দাঁড়ায় ৩.৮ শতাংশে। অনুমান করা যেতে পারে যে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে ৪.৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৭.৯ শতাংশের বেশি হবে না (Nordea Trade 2021)। বাংলাদেশের শীর্ষ ̄স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্প ̧লি (যেমন পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল লিংক, কর্ণফুলী রোড টানেল এবং বৃহত্তর ঢাকা টেকসই আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প) চীন থেকে ̄স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা লাভ করে থাকে। এসকল প্রকল্পের অনেকটাই মহামারীজনিত কারণে বাধাগ্রস্থ হয়েছে। তবে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতুর চূড়ান্ত স্প্যানটি স্থাপন করতে বাংলাদেশ সফল হয়েছিল। বাংলাদেশের তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্র, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, দেশের জিডিপিতে যথাক্রমে ১৮ শতাংশ, ২৯ শতাংশ এবং ৫৩ শতাংশ অবদান রাখে, যা করোনা ভাইরাস মহামারীতে বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়েছে । এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (২০২০) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ তার জিডিপি থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার হারাবে এবং করোনার কারণে প্রায় ৯ মিলিয়ন মানুষ চাকুরী হারাবে (Begum et al. 2020))।

মহামারীতে বাংলাদেশের দুগ্ধচাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লকডাউনের সময় দুধ বিক্রি করতে না পারায় দুগ্ধচাষিরা সরকারের কাছে তাৎক্ষণিক সহায়তা চেয়েছে। দেশজুড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ মিলিয়ন লিটার দুধ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে, যা প্রান্তিক দুগ্ধচাষীদের দৈনিক ৫ মিলিয়ন টাকার ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। লকডাউনের সময় মুরগি ও ডিমের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোল্ট্রি বাণিজ ̈ ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, পোল্ট্রি খাতে প্রায় ১,১৫০ কোটি টাকা থেকে ১,১৬০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

মহামারী চলাকালীন সময়ে দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়ে উঠেছে এবং ‘নতুন দরিদ্র’ জনগোষ্ঠীর উত্থান দেখা গিয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কোভিডের কারণে প্রায় ১৬.৪ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র ̈সীমার নিচে চলে গিয়েছে। এদের মধে ̈প্রায় ৫০ শতাংশ লোকের আয় হ্রাস পেয়েছে, ২০ শতাংশেরও বেশি লোকের মাসিক আয় ছিল ১৫,০০০ টাকার নিচে। বিআইডিএস পরিচালিত এই সমীক্ষায় আরও দেখা যায় যে, প্রায় ৫৭ শতাংশ লোক বলেছেন যে মহামারীকালীন সময়ে তাদের কোনো বেতন নেই, ৩২ শতাংশ লোকের মুনাফা হ্রাস পেয়েছে, এবং মাত্র ১১ শতাংশের একটি স্থিতিশীল আয় ছিল।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এর যৌথ উদ্যেগে পরিচালিত এক গবেষণা অনুসারে, ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধে ̈ গ্রামীণ মানুষের দৈনিক আয় ৭৯ শতাংশ কমেছে। শতকরা হারটি শহুরে দরিদ্রদের মধে ৮২ শতাংশ। শহুরে দরিদ্রদের খাদ ̈ বাজেটে ৪৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং গ্রামাঞ্চলের দরিদ্রদের মধ্যে এই হার ৩২ শতাংশ। ব্র্যাক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, প্রায় ৩৬ শতাংশ নগরবাসীর অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছে এবং ৩ শতাংশ কোনো বেতন পাননি। ব্র্যাক পরিচালিত আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৯৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমে গিয়েছে এবং ৬২ শতাংশ বেতনভুক্ত কর্মচারীকে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২০ এর সেপ্টেম্বর মাসে করা এক জরিপে দেখা গেছে যে, করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে পরিবার প্রতি গড়ে ৪ হাজার টাকা করে আয় কমে গেছে। মহামারীর এই সময়ে আয় কমে যাওয়ায় খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমে গেছে ৫২ শতাংশের মতো পরিবারের (বিবিসি ২০২০)। করোনার প্রভাব নিম্ন শ্রমজীবী শ্রেণির লোকদের উপর গভীরভাবে পড়েছে কারণ সমাজের উচ্চবিত্তরা সামাজিক দূরত্ব অব ̈াহত রাখতে গৃহকর্মী বা গৃহপরিচারিকার নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বে ৫০ কোটির বেশি লোক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মে নিযুক্ত, যা মোট জনশক্তির প্রায় ৮৫.১ শতাংশ। মহামারীটির কারণে প্রায় ৮০ শতাংশ দিনমজুর কর্মসং ̄’ান হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রটিকে চূড়ান্তভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করেছে করোনাকালীন সময়ে। সাম্প্রতিক কিছু তথ্য তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক ফলাফল বহন করে। বিশ্বব্যংকের (২০২১) রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃষিক্ষেত্র, শিল্প এবং সেবাখাত ২০২০ সালে জিডিপিতে যথাক্রমে ১২.৭ শতাংশ, ২৯.৬ শতাংশ ও ৫২.৮ শতাংশ অবদান রেখেছে এবং এই খাত ̧গুলি মোট জনশক্তির ৩৮ শতাংশ, ২২ শতাংশ ও ৪১ শতাংশের কর্মসংস্থনের ব্যবস্থা করেছে (Nordea Trade 202)। লকডাউনের পরে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার যেসব কৌশল অবলম্বন করেছিল তা ইতিবাচকভাবে কাজ করেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ এ এশিয়ার ছয়টি সীমান্ত বাজারের মধে ̈ বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধমান অর্থ নীতি হিসাবে গণ্য হবে ।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স (আইআইএফ) উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ ১.০ ট্রিলিয়ন টাকারও বেশি উদ্দীপনা সরবরাহ করেছে দেশীয় অর্থনীতিকে উন্নীত করতে (Mujeri 2021)। এই প্রতিবেদন অনুসারে, ঋণ সঙ্কটের ঝুঁকি কম হওয়ায় এটি বাংলাদেশের পক্ষে ইতিবাচক হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব:

করোনা মহামারির পর বিশ্বের মানুষ যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে এবং অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, এর মাঝেই শুরু হয়েছে ইউরোপের দুুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ; যার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবীর এক প্রান্তে কোনো সংকট তৈরি হলে তার প্রভাব পড়ে বিশ্বব্যাপী। এই যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব আবার বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ছোট আয়তনের জনবহুল দেশ হওয়ায় এর প্রায় সব কিছুর জন্যই বাইরের দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য, তেল, গ্যাস, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি পণ্য বাইরের দেশগুলো থেকে আমদানি করতে হয়।

বাংলাদেশ অনেক পণ্যই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গম, সূর্যমুখী তেল, ভুট্টা, তুলা, সরিষা, মসুর ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস ইত্যাদি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য এবং রাশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য।

বাংলাদেশ মূলত যে পণ্যটি ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করে থাকে তা হলো গম। সূর্যমুখী তেলের বড় অংশই আসে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন খাদ্যশস্য; যেমন—ভুট্টা, তুলা, সরিষা ও মসুর ডালের চাহিদাও এই দুটি দেশ থেকে পূরণ করা হয়।

কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এবং রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব পণ্য আমদানি করা নিয়ে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে এ দেশের অর্থনীতিতে এবং এর প্রধান ভুক্তভোগী হচ্ছে এ দেশের দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এরই মধ্যে আমরা লক্ষ করলে দেখতে পাই, বাজারে এসব পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি হারে বেড়েছে। এর ফলে দেশের প্রায় বেশির ভাগ মানুষেরই তাদের সীমিত উপার্জন দিয়ে পরিবার নিয়ে জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

আমরা লক্ষ করলে দেখতে পাই, গম, ভুট্টা, সরিষা—এই শস্যগুলো পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এগুলোর দাম বেড়ে গেলে পশুখাদ্যের দামও বেড়ে যাবে। এতে দরিদ্র খামারিরা গবাদি পশু পালনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাজারে তেলের সরবরাহ কমে যাওয়া। এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়বে। এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ আরো অনেক বেড়ে যাবে।

বর্তমানে রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী দেশ। রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে গ্যাসের দাম কয়েক গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে; যদিও বাংলাদেশের গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলো এরই মধ্যে গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এটি কার্যকর হলে মানুষের আয়ের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ ছাড়া আমরা জানি যে গ্যাস ও তেল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রয়োজন হয়। যদি গ্যাস ও তেলের দাম বেড়ে যায়, তাহলে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাবে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের আয় হ্রাস পাবে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেলে ফসল উৎপাদন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে, যা দেশে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। আর তৈরি পোশাক খাতের নতুন বাজার হচ্ছে রাশিয়া। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় প্রায় ৬০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু চলমান সংকট ও বিধি-নিষেধের জন্য পোশাক রপ্তানি নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা থেকে সহজে উত্তরণ সম্ভব নয়। যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হয় এবং আন্তর্জাতিক বিধি-নিষেধ শিথিল করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়ে যাবে।

এই পরিস্থিতি থেকে সহজেই উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো সংকটের মধ্যে পড়তে না হয়। নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে। যেসব পণ্য এই দুই দেশ থেকে আমদানি করতে হয়, এগুলোর বিকল্প কোনো দেশ থেকে আমদানি করে সাময়িকভাবে সংকট দূর করা যেতে পারে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল—এসব পণ্যে সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তা না হলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

লেখক ড. এ কে এম রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *