পি কে হালদারকে ফেরতের বিষয়ে যা বললেন দোরাইস্বামী

Slider সারাবিশ্ব


বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া পি কে হালদারকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরে সময় লাগতে পারে। কারণ এসব বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
মঙ্গলবার (১৭ মে) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ-ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে বিক্রম দোরাইস্বামী পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন। আগামী ৩০ মে দিল্লিতে জেসিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

পি কে হালদারের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, তার বিষয়ে কথা হয়েছে। এটি দুই দেশের নিয়মিত সহযোগিতার একটি অংশ।‌ দুই দেশের অপরাধীদের মোকাবিলার জন্য পারস্পরিক আইনি‌ সহায়তাসহ নানা ধরনের কাঠামো রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তথ্য দিয়েছে। ভারতীয় সংস্থা ওই তথ্য যাচাইয়ের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং অপরাধীদের দমনের জন্য সহযোগিতা রয়েছে।

পি কে হালদারকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অনুরোধ করেছে কি না-জানতে চাইলে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, দেখুন এটি একটি আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়। গত সপ্তাহে ছুটির দিনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে যা তথ্য আছে, তার ভিত্তিতে একটা সময় বাংলাদেশকে জানানো হবে। বুঝতে হবে এটি কিন্তু বড়দিনের কার্ড বিনিময় নয়। আমি মনে করি, এ ধরনের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়,‌ সেটি আস্তে আস্তে হতে দিন। এ নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি। এ তথ্য বাংলাদেশ‌ থেকে এসেছে।

এদিকে পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের অধীনে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে তাকে হাজির করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

আদালতে আর ১৪ দিনের রিমান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানায় ইডি। সিবিআই স্পেশাল কোর্টের বিচারক মাসুক হোসেইন খান ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ১৪ মে পি কে হালদার ধরা পড়েন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) ফাঁদে। এ সময় পি কে হালদারের স্ত্রী ও ভাই প্রাণেশ হালদারসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৫ মে বারাসাতের আদালতে তোলা হলে তদন্তের স্বার্থে তাদের ১৭ মে পর্যন্ত তিন দিনের ইডি হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।

এক বিবৃতিতে ইডি বলেছে, হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পি কে হালদার নাম পাল্টে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে বসবাস করতেন। প্রদেশের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশি নাগরিক প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রশান্ত কুমার হালদার নিজেকে শিব শঙ্কর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।

বাংলাদেশি এ অর্থপাচারকারী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ভারতীয় রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান এবং আধার কার্ডও সংগ্রহ করেছিলেন। প্রশান্ত কুমার হালদারের অন্য সহযোগীরাও ভারতীয় এসব কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।

এদিকে ভারতে গ্রেফতার পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর জারি করা রুলের ওপর আগামী ১২ জুন শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অগ্রগতি জানাতেও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। এর আগে শুনানিতে পি কে হালদারকে ভারতে গ্রেফতারের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনে দুদক।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দেশে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে এই অর্থ পাচার করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি ইন্টারপোল শাখার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *