দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বৃটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সে দেশের পার্লামেন্টের প্রভাবশালী ১০ সদস্য। বৃটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুমের ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। এতে স্বাক্ষর করেছেন রক্ষণশীল দলের পিটার বটমলি ও বব ব্লাকম্যান, লিবারেল ডেমক্রেটস দলের জুলিয়ান হাপারট ও বব রাসেল, লেবার পার্টির জন ম্যাকডোনেল ও লিজ ম্যাকইনস, সোশাল ডেমক্রেটিক দলের মার্ক ডারকান, রেসপেক্ট দলের জর্জ গ্যালাওয়ে, ডেমক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির জিম শ্যানন ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমপি মাইক হ্যানকক। তাদের এ উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছে ‘আরলি ডে মোশন’। এতে তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক একটি প্রক্রিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। বিশেষ করে জোর দেয়া হয় গুম হয়ে যাওয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের প্রসঙ্গ। ২৩শে মার্চ বৃটিশ পার্লামেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ আরও অনেক গুমের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাংলাদেশে অবাধ ও উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিসরের অভাবের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের অবসান ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২০১২ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে জোরপূর্বক গুম করা হয়, যার অবস্থান এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। বিরোধী দলের সদস্যদের জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় তদন্তে ব্যর্থতার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সম্প্রতি এমন একটি মন্তব্যও তুলে ধরা হয় বৃটিশ পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে বার বার বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগ উঠছে। উল্লেখ্য, এ বছর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েক দফায় বৃটিশ পার্লামেন্টে আলোচনা হয়েছে। তাতে বার বারই একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নতুন নির্বাচনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংকট উত্তরণে তারা জাতিসংঘের সম্পৃক্ততাকেও সমর্থন করেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি লিখেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি মুন। এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় বৃটেন। গত ৯ই মার্চ বৃটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে শুনানি হয়। সেখানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততাকে অব্যাহতভাবে উৎসাহিত করে যুক্তরাজ্যÑ এমন মন্তব্য করেন লর্ড ব্যারোনেস অ্যানিলে। ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো পদে থাকা লর্ড অ্যাভাবুরির এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারোনেস অ্যানিলে ওই মন্তব্য করেন। তিনি তখন বলেন, দেশব্যাপী সহিংসতা ও উত্তেজনার অবসানে সব দলকে একে অন্যের ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লর্ড অ্যাভাবুরি ২৩শে ফেব্রুয়ারি তার কাছে জানতে চান, জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুনের কাছে যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি প্রস্তাব দেবে কিনা, যাতে বলা হবে বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি মুনকে আমন্ত্রণ জানাতে বলা হবে কিনা, যাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পারে। তাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর হয়। ব্যারোনেস অ্যানিলে তার প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি মুন চিঠি লিখেছেন। এ খবর পেয়েছি আমরা। এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। লর্ড অ্যাভাবুরি হলেন লিবারেল ডেমোক্রেট দলের পার্লামেন্টারিয়ান। তিনি লিবারেল দলের চিফ হুইপও। অন্যদিকে, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকা- নিয়েও ওই সময়ে আলোচনা হয় পার্লামেন্টে। এ বিষয়ে ৯ই মার্চ প্রশ্ন করেন লিভারপুরের লর্ড অ্যাল্টন। তিনি জানতে চান, ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ১৮ অনুচ্ছেদের অধীনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বৃটিশ সরকার তার অবস্থান জানিয়েছে কিনা? এদিনই তার এ প্রশ্নের উত্তর দেন ব্যারোনেস অ্যানিলে। তিনি বলেন, আমরা মানবাধিকারের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিই। বিশ্বাসযোগ্য কোন অভিযোগ থাকলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা তা নিয়ে উদ্বেগ উত্থাপন করে আসছি। আমরা আহ্বান জানাই সকল ঘটনা যেন দ্রুত, স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়। ২০১৩’র ২৯শে এপ্রিল, মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের ২য় ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা দলগুলোকে সুরক্ষা করতে আরও বেশি কিছু করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাজ্য। মার্কিন নিবাসী অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা- এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় বৃটেনের তরফ থেকে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার। এছাড়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে যেসব সহিংসতা হয়েছে তা নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়।