ঢাকায় প্রায় ৯৫ শতাংশই কিউলেক্স মশা, নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা বেশি

Slider জাতীয়


রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি কিউলেক্স মশা, বাকি পাঁচ শতাংশের বেশি মশা এডিস প্রজাতির। নির্মাণাধীন ভবনে ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং বহুতলা ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

আজ বুধবার (২৭শে এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাক-মৌসুম জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ‘প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত ২৩ শে মার্চ থেকে ৩ই এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিন ধরে প্রাক-মৌসুম জরিপ চালানো হয় ঢাকার ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০টি স্থানে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪০টি, মোট ৮০টি স্থানে পূর্ণাঙ্গ মশার ধরার ফাঁদ পাতা হয়।
এসব ফাঁদে দুই হাজার ৮১৪টি মশা ধরা পড়ে। এরমধ্যে দুই হাজার ৬৭১টি কিউলেক্স ও অন্যান্য প্রজাতির মশা। এডিস মশা পাওয়া যায় ১৪৩টি।
ফাঁদে যেসব মশা ধরা পড়েছে তার মধ্যে ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা। বাকি পাঁচ দশমিক এক শতাংশ এডিস মশা।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ডিএসসিসি এলাকায় ১০৬টি এবং ডিএনসিসি এলাকায় ৩৭টি এডিস মশা পাওয়া গেছে। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আবার কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেশি। উত্তরে ১৫৪২টি এবং দক্ষিণে ১১২৯টি কিউলেক্স মশা পাওয়া গেছে।

এডিস মশা প্রাণঘাতী ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী। আর কিউলেক্স মশা ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের জন্য দায়ী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার ঘনত্বের পরিমাপক ব্রুটো ইনডেক্স কিছুটা বেশি।

ডিএসসিসির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ

এছাড়া ৩৮ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশ। মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। ডিএসসিসির ২১, ১৫, ২৩, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ১০ শতাংশের বেশি এবং ৮, ১৪, ২০, ৩৫, ৪৬ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ১০ শতাংশ।
ডিএনসিসি’র ২০, ৩২ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ১০ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে। এছাড়া ১০, ১৩, ১৬,২৭, ৩০ এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ১০ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রাক-মৌসুমি জরিপে এডিস মশার পজিটিভ প্রজনন স্থানের প্রাপ্ত্যতার ভিত্তিতে পজিটিভ বাড়ির শতকরা হার নির্মাণাধীন ভবনে ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ, বহুতলা ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, একক ভবন সমূহে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ, সেমিপাকা/ বস্তি এলাকায় ৯ দশমিক, এবং পরিত্যক্ত(ফাঁকা) জমি সমূহে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ মশার লার্ভা পরিলক্ষিত হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হবে। এমনকি, পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছি। কারণ, ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধির বেশিরভাগ কারণই হলো মানুষের তৈরি। ডেঙ্গু প্রকোপের প্রকৃতিগত যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তবে আমরা মনে করি, সচেতনতা আমাদের অনেকাংশেই মুক্তি দিতে পারে।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণে আমরা এখন ভালো পরিস্থিতিতে আছি। সেটি আমাদের অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। এ মুহূর্তে যদি আবার ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ে, তাহলে পুনরায় আমাদের স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হতে পারে। তাই এর আগাম প্রতিরোধ করতে হবে।

খুরশীদ আলম বলেন, করোনাকালে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তদের সঙ্গত কারণেই বিড়ম্বনায় ভুগতে হয়েছে। অনেকেই সময়মতো সার্জারিসহ নানা চিকিৎসা নিতে পারেননি। ক্যান্সার ও প্রসূতি মায়েরা সর্বাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তাই করোনার মতো আরেকটি চ্যালেঞ্জে যেন আমরা না পড়ি, সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা এবার হতে দেয়া যাবে না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।

এজন্য মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। মশা যদি ডিম না পাড়ে তাহলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এমনিতেই কমে আসবে। আমরা এই জায়গাটায় সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ ফয়েজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, এনসিডি-এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, আইইডিসিআর’র পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন, সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *