শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও

Slider সারাবিশ্ব


শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাসভবন ঘেরাও করেছে হাজারো শিক্ষার্থী। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রোববার (২৪ এপ্রিল) রাজধানী কলম্বোয় তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম সবচেয়ে বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে নিত্য-প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর তীব্র সংকট চলছে। আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন।

উৎপাদনে ভাটা পড়ায় দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। দীর্ঘ কয়েক মাসের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা, রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি এবং তীব্র খাদ্য ও জ্বালানি ঘাটতি লঙ্কানদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। ফলে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে।

বিক্ষোভকারীরা যাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে যেতে না পারে, সেজন্য রোববার (২৪ এপ্রিল) রাজধানী কলম্বোর বিভিন্ন সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে এগিয়ে যায় বিক্ষোভরত হাজারো শিক্ষার্থী। দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অজ্ঞাত এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘আপনি রাস্তা অবরোধ করতে পারেন, কিন্তু পুরো সরকার ঘরে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম থামাতে পারবেন না।’

পুলিশ বলছে, শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান মাহিন্দা রাজাপক্ষে এই সময় বাসভবনে ছিলেন না। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সেখান থেকে চলে গেছেন। মাহিন্দার ছোট ভাই ও দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের অফিসের বাইরে গত প্রায় দুই সপ্তাহের প্রত্যেকদিন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।

এর আগে দেশজুড়ে বিক্ষোভের সময় উত্তেজিত জনতা সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়ি ও অফিসে হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। গত সপ্তাহে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর রামবুক্কানায় সড়ক অবরোধ করে উত্তেজিত জনতার বিক্ষোভের সময় গুলি চালায় পুলিশ। দেশটিতে চলমান বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে এই শহরে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র পর্যটন খাতের আয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। করোনা মহামারির কারণে দেশটির পর্যটন খাতে ব্যাপক ধস নেমেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় এর দামও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে দেশটিতে চাল, গুঁড়া দুধ, চিনি, গমের আটা এবং ওষুধের সরবরাহ কমেছে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি মানুষের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা, ঋণ নিলেও বছরের পর বছর ধরে তা পরিশোধের ব্যবস্থা না করা, ২০১৯ সালে অযৌক্তিক শুল্ক কাটছাঁট এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ সহায়তার আলোচনা পিছিয়ে যাওয়ায় চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। তবে আইএমএফের ঋণ সহায়তার বিষয়ে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *