জাতিসংঘের রেড অ্যালার্ট জলবায়ু পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


গ্লোবাল ওয়ার্মিং যে হারে বাড়ছে তা গভীর মানবিক দুর্দশা এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে এবং এই বিপর্যয় এড়াতে একমাত্র উপায় গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা। এই বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট পেশ করেছে রাষ্ট্রসংঘ। এই রিপোর্টে মূলত পরিবেশে বিজ্ঞানের প্রভাব, মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা এবং অবশেষে কীভাবে কার্বন দূষণ কমানো যায় এই বিষয়গুলোকে ফোকাস করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য তাদের চূড়ান্ত উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে। পাঁচটি মূল বিষয় অনুসন্ধান করেছে আইপিসিসি।

মানব কার্যকলাপ উষ্ণায়নের জন্য দায়ী: জলবায়ু নিয়ে সংশয়বাদীরা যাই বলুক না কেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলো যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী সন্দেহ দূর করেছে যে মানব কার্যকলাপ ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী, মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন দূষণের কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বেড়েছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির এলাকাগুলো প্রি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেলের। বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ যে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিষ্ক্রমণ, তা ১৯০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ১০০ বছরে যতটা বেড়েছে তা শেষ ৮ লাখ বছরে বৃদ্ধি পায়নি।

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য: ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বৈশ্বিক উষ্ণতাকে অন্তত ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এ ক্যাপিং করার আহ্বান জানিয়েছে।
মারাত্মক প্রভাবগুলোর একটি ঢেউ ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে অনুভূত হচ্ছে এবং বেশির ভাগ দেশের উচ্চাশা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওচঈঈ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা গড়ে ১.৫ ডিগ্রি থেকে ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। আগের থেকে যা অনেকটাই বেশি। কিন্তু পরবর্তী ৭০ বছরে সেই তাপমাত্রা বাড়বে অনেকটা বেশি, প্রায় ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর জেরে মেরুতে, পাহাড়ে এবং উপকূলের বাস্তুতন্ত্রের অপরিসীম ক্ষতি হতে পারে। এরপরেও যদি দেশগুলো প্যারিস চুক্তির অধীনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলমান গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাস না করে তাহলে তারা গুরুতর চ্যালেঞ্জ-এর মুখোমুখি হবে।

দুর্ভোগের দিন: জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী ভবিষ্যদ্বাণী এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা- ৩.৩ থেকে ৩.৬ বিলিয়নের মধ্যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মারাত্মক প্রভাবগুলোর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, যা আরও খারাপ হতে পারে। ইতিমধ্যেই তাপপ্রবাহ এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, আক্ষরিক অর্থেই তা বসবাসের অযোগ্য, সুপারস্টর্মগুলো আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে, সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে, পানির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, খরার প্রকোপ বাড়ছে সেইসঙ্গে বাড়ছে মশার প্রাদুর্ভাব। তালিকাটা আরও দীর্ঘ। এগুলোই একদিন পৃথিবীর জনসংখ্যা ধ্বংসের কারণ হবে। গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাবার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছে বসবাসকারী কয়েক মিলিয়ন মানুষ শেষ পর্যন্ত তাদের বাড়িঘর হারাতে পারেন। এমনকি যদি গ্লোবাল হিটিং ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেও সীমাবদ্ধ করা হয়, তাহলে সমুদ্রগুলোতে ২১০০ সালের মধ্যে আধা মিটার এবং ২৩০০ সালের মধ্যে দুই মিটার জলস্তর বাড়বে।

একমাত্র অপশন: আইপিসিসি জোর দিয়ে বলেছে যে, শুধু সুপারিশ প্রদান করেই কাজ সারলে চলবে না, এই গ্রহের বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য সঠিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে। শিল্প, পরিবহন, কৃষি, শক্তি ক্ষেত্রে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। কয়লা, গ্যাস এবং তেলের ব্যবহার যথাক্রমে ৯০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ হারে কমিয়ে আনতে হবে।

টিপিং পয়েন্ট: তাপমাত্রার সীমারেখা একবার অতিক্রম করলে গোটা বিশ্ব যে ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে এমন বিপদের কথা আইপিসিসিকে আগে জোর দিয়ে বলতে শোনা যায়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বরফের স্তরগুলোর বিচ্ছিন্নতা সমুদ্রের স্তরকে ক্রমে বাড়িয়ে তুলতে পারে। গ্রিন হাউস গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার সমন্বিত পারমাফ্রস্টের গলে যাওয়াকে আমরা বায়ুমণ্ডল থেকে দূরে রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন থেকে সাভানাতে আমাজন অববাহিকায় রূপান্তর- সবই অতিরিক্ত বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্বারা ট্রিগার হতে পারে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন, কিন্তু তারা জানেন যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির জেরে ১৯ শতকের পৃথিবীর তুলনায় বর্তমান পৃথিবী আজ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। যদি তাপমাত্রা ২.৫ ডিগ্রির বেশি হয়ে যায় তাহলে প্রলয় আসতে বেশি বাকি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *