রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল বিক্রি করছে। এর পরও বাজারের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার নতুন করে ভোজ্য তেলের দর নির্ধারণ করেছে। তবে বাজারে তেলের সরবরাহ কম।
এ ছাড়া বেশি দামে কেনা পুরনো ডিওর কী হবে, তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বেশি দামে কেনা পুরনো ডিওর বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ ছাড়া কম্পানিগুলো পুরনো ডিওতে আগের দামে পণ্য নিতে তাগাদা দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ভোজ্য তেল দিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। সরকার নানা প্রণোদনা দেওয়ার পরও তেলের দাম কমানো হচ্ছে না।
সর্বশেষ গত রবিবার ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লিটারপ্রতি আট টাকা দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। আগের নির্ধারিত দর থেকে খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন আট টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৩৫ টাকা কমিয়ে ৭৬০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল সাত টাকা কমিয়ে ১৩৬ টাকা করা হয়েছে।
গত রবিবার ভোজ্য তেলের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল থেকে মিলগেটে এই দর বাস্তবায়ন করা হবে। আর বাজারে এর প্রভাব পড়তে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগবে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে তেলের সরবরাহ কম। এক লিটার সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৯৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা দোকানে এক লিটারের ভোজ্য তেলের বোতল ছিল খুবই কম। সরকারের দাম কমানোর সিদ্ধান্তে বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না, জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের বাণিজ্য বিতানের বিক্রয়কর্মী রমিজ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার রবিবার ভোজ্য তেলের নতুন দর নির্ধারণ করেছে। সেই হিসাবে বাজারে প্রভাব পড়তে আর এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ ছাড়া আজ কোনো তেল কম্পানির প্রতিনিধি আসেননি।
শান্তিনগর বাজারের মতলব স্টোরের মো. শাহীন মিয়া বলেন, তেলের দাম কমবে, এ আশায় এক লিটারের তেল আনেননি তাঁরা। এ ছাড়া দাম কমার ফলে আগের তেল বিক্রি করতে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাজার করতে আসা শান্তিনগর পীর সাহেব গলির রুকসানা আক্তার মিলি বলেন, সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিলে ব্যবসায়ীরা সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িয়ে দেন। কিন্তু কমানোর সিদ্ধান্ত হলে সময় নেন এক সপ্তাহ থেকে এক মাস। সব ভোগান্তি ভোক্তার।
পুরান ঢাকার ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো বলেন, ‘তেল পরিশোধনকারী কম্পানির প্রতিনিধিরা দর কমানোর বিষয়ে সরকারের নির্দেশনায় একমত হলেও তাঁদের আগের দেওয়া এসওতে ভ্যাট-ট্যাক্স সব নিয়েছেন। আমাদের কাছে যে ডিও আছে, তাঁরা কি কমিয়ে রাখবেন? এখনো অনেক ব্যবসায়ীর কাছে এক-দেড় মাসের ডিও আছে। ’
নতুন দরে নতুন ডিও না দিলেও আগামী ২৪ মার্চের মধ্যে পুরনো ডিওর তেল ওঠানোর চাপ দিচ্ছে কম্পানিগুলো।
পুরান ঢাকার পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা বলেন, সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা আরো স্পষ্ট করা দরকার। মিলগেটের দর পাইকারি বা পরিবেশকরা কত দামে সরবরাহ আদেশ নেবে, সেটি উল্লেখ করা দরকার।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, আগের সরবরাহ আদেশের দর কী হবে, তা পরিষ্কার করা না হলে মিল মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে।