কম মূল্যে খাদ্য দিতে কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

বাংলাদেশে ভোজ্যতেল এবং ডালসহ কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কম দামে দেয়ার জন্য এক কোটি পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে এসেছে। এমনটাই বলছে কর্তৃপক্ষ।

এই তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারকে ‘বিশেষ কার্ড’ নামের একটি করে কার্ড দেয়া হবে।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ট্রেড করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে তালিকাভূক্ত পরিবারগুলোকে রমযানের আগে ২০ মার্চ থেকে সারাদেশে এক যোগে সাশ্রয়ী দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দেয়া শুরু করবে। তবে দলীয় বিবেচনার বাইরে থেকে স্বচ্ছ্বতার সাথে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের এই তালিকা তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

কোটি পরিবারের তালিকা
বিশেষ কার্ডের জন্য এক কোটি পারিবারের তালিকা তৈরি করছেন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় নগদ অর্থ সহায়তা দিতে ৩৮ লাখ পরিবারের তালিকা করা হয়েছিল। সেই তালিকা যাচাই বাছাই করে ৩০ লাখ পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এর সাথে সারাদেশে নতুন যুক্ত করা হচ্ছে ৭০ লাখ পরিবারকে।

কিন্তু মহামারির মধ্যে অর্থ এবং খাদ্য সহায়তার তালিকা নিয়ে অনেক এলাকায় দলীয় চিন্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের ভোটের বিবেচনায় লোকজন অন্তর্ভূক্ত করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল।

তবে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আরিফুল হাসান বলেছেন, সারাদেশে যে তালিকা করা হচ্ছে, তা যাচাই করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

এই তালিকা স্বচ্ছ্বতার সাথে হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা এলাকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত। ফলে তারা দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষের সঠিক তথ্য দিয়ে তালিকা তৈরি করতে পারবে। তালিকা চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী কার্ড তৈরি হবে এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সেই কার্ড তালিকাভূক্তদের কাছে পৌঁছানো হবে।

দেশের অন্যান্য এলাকায় যে তালিকা করা হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে এই তালিকা কতটা সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে-তা নিয়ে জনপ্রতিনিধিদেরও অনেকের সন্দেহ রয়েছে।

উত্তরের জেলা জয়পুরহাটের দোগাছি ইউনিয়নের প্যাণেল চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম বলেছেন, মেম্বারদের নিজেদের এলাকার তালিকা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি।

‘মেম্বারদের এলাকায় তালিকা তৈরির জন্য একদু’দিন সময় দেয়া হয়। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে আশেপাশে বসবাসকারী এবং প্রতিবেশিদের মধ্য থেকে তালিকা করে দিয়েছি’ বলেন আনোয়ারা বেগম।

তবে টিসিবির কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথমে ৫০ লাখ পরিবারকে এই কর্মসূচির আওতায় নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

ফলে সময় কিছুটা কম। কিন্তু তালিকা নিয়ে যাতে বিতর্ক না হয়, সেজন্য ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তালিকা নিয়ে তা উপজেলা এবং জেলা প্রশাসন যাচাই করছে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণারয়ের টিমও যাচাই বাছাই করছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

জেলা উপজেলা এবং এবার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত টিসিবির ডিলারের মাধ্যমে কার্ড দেখিয়ে সাশ্রয়ে পণ্য কেনা যাবে।

তালিকাভূক্ত একেকটি পরিবার বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে রমযানের আগে এবং ঈদের আগে দুই দফায় কমদামে পাঁচটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্যাকেট পাবেন।

প্রতিটি প্যাকেটে দুই লিটার ভোজ্যতেল, চিনি দুই কেজি, দুই কেজি ছোলা, দুই কেজি মসুর ডাল এবং পাঁচ কেজি পেঁয়াজ থাকবে।

২০ মার্চ থেকে কার্ডের মাধ্যমে রমযানের আগে প্রথম কিস্তির পণ্য দেয়া শুরু হবে। তবে এই বিশেষ কার্ড দেয়ার কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে রাজধানী ঢাকা এবং বরিশাল নগরীকে।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই দু’টি নগরীতে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ ভাসমান বেশি হওয়ায় তালিকা করা সম্ভব নয়। সেজন্য ঢাকা এবং বরিশালে টিসিবি ট্রাকে করেই কমদামে পণ্য বিক্রি অব্যাহত রাখা হবে।

কমদামের পণ্য সংগ্রহ হবে কীভাবে
বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে কমদামে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পাঁচটি পণ্য দেয়ার এই কর্মসূচির জন্য বেশিরভাগ পণ্যই সংগ্রহ করা হবে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে।

টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আরিফুল হাসান বলেন, অল্পসময়ের মধ্যে এই কর্মসূচি চালু করার জন্য যেটা সম্ভব হচ্ছে, সে অনুযায়ী তারা পণ্য সংগ্রহ করছেন। কিছু পণ্য দেশ থেকে এবং কিছু বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। টিসিবি নিজেরা ছোলা আমদানি করেছে। আর খেজুর আনা হয়েছে দেশীয় আমদানিকারকদের মাধ্যমে।

তিনি আরো জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে যখন এক কোটি পরিবারকে কম দামে পণ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তখনই ভোজ্যতেলের দেশীয় কোম্পানিগুলোকে টিসিবি চাহিদা জানিয়েছিল। সে অনুযায়ী কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত আমদানি করেছে।

ডাল এবং পেঁয়াজ সংগ্রহের ব্যাপারে টিসিবি দেশীয় আমদানিকারকদের সহায়তা নিয়েছে।

বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করেছেন, এমন একজন অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মুখে সরকারকে এমন কর্মসূচি নিতে হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজার থেকে সেই কর্মসূচির পণ্য কেনা হলে তাতে অস্থির বাজারে সেভাবে প্রভাব পড়বে না বলে তিনি মনে করেন।

তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, এক কোটি পরিবার যখন কমদামে পণ্য পাবেন, তাতে একেকটি পরিবারে পাঁচজন সদস্য ধরা হলে পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবে।

তারা উল্লেখ করেন, ট্রাকে করে কম দামে পণ্য দেয়ার ক্ষেত্রে আসলে যারা দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের মানুষ তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। একই ব্যক্তি বার বার বা প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে সুবিধা নিচ্ছেন। এ ধরনের অভিযোগও কর্তৃপক্ষ পেয়েছে।

কার্ডের ব্যবস্থা করার পেছনে এটিকেও একটি কারণ হিসাবে বলছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কম দামে পণ্য দেয়ার এই কার্ডকে কর্তৃপক্ষ রেশন কার্ড বলতে রাজি নয়।

তারা বলছে, এই কার্ডের মাধ্যমে নিয়মিত পণ্য বিক্রি করা হবে না। কিন্তু যে কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে এই বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা দেয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *