ভ্যাট প্রত্যাহার ঘোষণায় কমেনি তেলের দাম

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

ভোক্তাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ভোজ্যতেল আমদানি ও খুচরা মূল্যে ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার, তবে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি বাজারে। দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ কম। পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।

অথচ দামের লাগাম টানতে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা বৃহস্পতিবার জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরের দিন শুক্রবার বাজারগুলোতে দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তির। কারণ, ছোলা আমদানিতে কোনো শুল্ক-কর আগে থেকেই ছিল না। আর চিনির ওপর নতুন করে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে।

ভোজ্যতেলের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) প্রত্যাহার করলে সুফল পাওয়ার কথা। তবে অর্থমন্ত্রী যেভাবে ভ্যাট ছাড় দেয়ার কথা বলেছেন, তাতে ব্যয় আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিগুলো।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বাজারগুলোতে আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে।

একটি অনলাইন পোর্টালকে মোহাম্মদপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, দাম কমেনি; বরং তেলই নেই বাজারে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিনের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৬৮ টাকা। শেওড়াপাড়া বাজারের মুদি দোকানি লোকমান হোসেন জানান, নতুন করে কোনো তেল আসেনি। তাই দাম কমার সুযোগ নেই।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী হারুন মিয়া জানান, নতুন তেল সরবরাহ করা হয়নি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন। খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৮৪০ টাকায়।

ভোজ্যতেল
অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, সয়াবিনের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, শুধু উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট তুলে নিলে তাদের ব্যয় আরো বাড়বে। কারণ, আমদানি পর্যায়ে যে ভ্যাট রয়েছে, সেটা দিতে হবে। পরে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে রেয়াত নেয়ার সুযোগ থাকবে না।

ভোজ্যতেল বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশনস) মো. শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, ‘আমরা যেহেতু প্রজ্ঞাপন এখনো পাইনি, তাই জানিনা কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে। তবে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট তুলে নিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং ব্যয় বাড়বে।’ তিনি বলেন, এখন তিন পর্যায়ে ভ্যাট দাঁড়ায় লিটারপ্রতি ২৬ থেকে ৩০ টাকা।

এদিকে রোজার আগে তেল আমদানি বেড়েছে। দেশে গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সয়াবিন ও পাম তেল মিলিয়ে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬০ হাজার টন বেশি। সয়াবিন তেল উৎপাদনের কাঁচামাল সয়াবীজও ৩৯ হাজার টন বেশি আমদানি হয়েছে।

এদিকে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেয়ার পর গতকালই ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। ফলে প্রজ্ঞাপন জারি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে এনবিআর। আর আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

ভ্যাট প্রত্যাহারে সয়াবিন তেলের দাম কত কমবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেছেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারির আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এ ব্যাপারে একটা হিসাব করবে। এরপর বলা যাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *