গাজীপুরের শ্রীপুরে উইলের জমি বিক্রি করতে রাজী না হওয়ায় এক নারীকে গলা কেটে খুন করেছে তার মেয়ে ও সহকর্মী (মেয়ের)।
ঘটনার তিন সপ্তাহের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত নিহতের একমাত্র মেয়ে ও তার সহকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় শ্রীপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার এসআই মো: আমজাদ শেখ উপস্থিত ছিলেন।
নিহত মিনারা বেগম (৫৭) শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী। গ্রেফতারকৃত শেফালী (৩৫) নিহতের একমাত্র সন্তান এবং শেফালীর সহকর্মী সোহেল রানা (২৫) শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার খড়িয়াকাজিরচর গ্রামের মেরাজ উদ্দিনের ছেলে। গ্রেফতারকৃতরা শ্রীপুরের বিজিবেড গার্মেন্টসের কর্মী।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামের সাধুখার টেক এলাকার গভীর জঙ্গল থেকে অজ্ঞাত এক নারীর (৫৭) গলকাটা লাশ উদ্ধার করে শ্রীপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ একটি হত্যা মামলা করে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সিআইডি ও পিবিআই’র এর বিশেষজ্ঞ দল নিহতের পরিচয় সনাক্ত করণে ব্যার্থ হয়।
এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ বিভিন্ন আঙ্গিকে তদন্ত শুরু করে। এদিকে সম্প্রতি দেলোয়ারা বেগম নামে এক নারী তার ছোট বোন মিনারা বেগমের নিখোঁজের বিষয়ে অভিযোগ করতে থানায় আসেন। নিখোঁজ মিনারার ছবির সাথে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত ওই নারীর লাশের ছবির ছবির মিল পান দেলোয়ারা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমজাদ। অজ্ঞাত ওই লাশের পরিচয় সনাক্ত তথ্যানুসন্ধানের পর পুলিশ বুধবার প্রথমে নিহতের জামাতা ফরিদকে ও পরে শেফালীকে পরদিন সোহেল রানাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা মিনারাকে হত্যার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলের পাশের একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রায় ২০ বছর আগে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী মিনারা বেগম ও শিশু সন্তান শেফালীকে ফেলে রেখে অন্যত্র চলে যান আবু তাহের (মিনারার স্বামী)।
মিনারা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে শেফালীকে বড় করেন এবং স্থানীয় কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে অটোচালক মো. ফরিদের সাথে বিয়ে দেন। মিনারা তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া ৯ শতাংশ জমি একমাত্র সন্তান শেফালীকে ৮ বছর আগে উইল করে দেন।
তারা জানায়, মায়ের জীবদ্দশায় উইলের ওই জমিসহ একমাত্র সম্বল দু’টি গরু বিক্রি করতে না পেরে শেফালী তার মা মিনারার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে মিনারা রাজী না হলে মা ও মেয়ের মাঝে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে শেফালীকে চড় থাপ্পড় দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তার মা। এ ঘটনায় মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি নিয়ে শেফালী তার সহকর্মী সোহেল রানার সাথে কথা বলে। তারা দু’জনে মিনারাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একাজের জন্য শেফালীর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে সোহেল। শেফালী এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে সোহেলকে ১৫ হাজার টাকা অগ্রীম দেয় এবং বাকী ৮৫ হাজার টাকা কাজ শেষে দিবে বলে জানায় শেফালী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার কথা বলে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর মা মিনারাকে বাড়ি থেকে রওনা হয় শেফালী। পথে কেওয়া সিআরসি মোড় এলাকায় সোহেলের জন্য মাকে নিয়ে শেফালী অপেক্ষা করতে থাকে। রাত ৮টার দিকে সোহেল সেখানে এসে পৌঁছলে তারা তিনজন একটি অটোকশায় বরমীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রিকশায় চড়ে কিছুদুর যাওয়ার পর সোহেলের দেয়া সেভেনআপ খেয়ে মিনারা অচেতন হয়ে পড়ে। তারা ভিটিপাড়া গ্রামের সাধুখাঁর টেক এলাকায় গভীর জঙ্গলের কাছে পৌঁছে অটোরিকশাটি ছেড়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাটতে থাকেন। এ সময় শেফালী ইট দিয়ে তার মায়ের মাথায় আঘাত করলে মিনারা মাটিতে পড়ে যান। পরে শেফালী তার মাকে মাটিতে চিৎ করে শোয়ায়ে বুকে ওপর বসে। শেফালী দুই হাত দিয়ে পশু জবাইয়ের মতো তার মায়ের মাথা ও গলা টেনে ধরে। এ সময় সোহেল ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে (জবাই)। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মিনারা।
মিনারার মৃত্যু নিশ্চিত হলে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু পাশের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।